(বাঁ দিকে) দর্শন হীরানন্দানি। মহুয়া মৈত্র (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
মুম্বইয়ে হীরানন্দানি গ্রুপের অফিসে তল্লাশি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার কিছুটা পরে হীরানন্দানিদের মুম্বইয়ের দফতরে তল্লাশি শুরু করেছে ইডি। বিদেশে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে এই তল্লাশি চলছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, হীরানন্দানিদের দফতর ছাড়়াও আরও কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চলছে।
বস্তুত, এই আইনেই গত সপ্তাহে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ইডি নোটিস পাঠিয়েছিল। তবে এটি পৃথক মামলায় তল্লাশি বলে খবর। মহুয়া দাবি করেছিলেন, তিনি কোনও নোটিস পাননি। হাজিরাও দেননি। পরে পাল্টা একটি আইনি চিঠি পাঠান ইডিকে। ইডি আবার মহুয়াকে নোটিস পাঠিয়েছে বলেই তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এখন দেখার, মহুয়া এ বার হাজিরা দেন কি না। তার মধ্যেই হীরানন্দানি গ্রুপের দফতরে ইডির তল্লাশি।
গত ডিসেম্বরে লোকসভার সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল লোকসভার এথিক্স কমিটি। ৪৯৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দিয়েছিল তারা। ওই রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য সময় চেয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলগুলির তরফেও স্পিকারের কাছে সময় চেয়ে জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু স্পিকার ওম বিড়লা তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। বহিষ্কারের পর মহুয়া জানিয়েছিলেন, তিনি এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন! আগামী ৩০ বছর লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে লড়াই করবেন। বহিষ্কারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে এখনও মামলাটি বিচারাধীন।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার ও টাকা নিয়ে সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নে তিনি আদানির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। সাংসদের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ডও মহুয়া দর্শনকে (অথবা তাঁর অফিসকে) দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের। একই অভিযোগ করেছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। অভিযোগ ওঠার পরে মহুয়া জানিয়েছিলেন, বন্ধু দর্শনকে তিনি আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন শুধুমাত্র তাঁর প্রশ্নগুলি ‘টাইপ’ করে দেওয়ার জন্য। কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত সাংসদ এমনও দাবি করেছিলেন যে, ওই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা বিধি নেই। অনেক সাংসদই এ ভাবে অন্যের কাছে তাঁদের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকেন। সেটা শুধুমাত্র কাজের সুবিধার জন্য। তবে হীরানন্দানিদের অফিসে ইডির তল্লাশি নিশ্চিত ভাবেই বিষয়টিতে আবার অন্য মাত্রা যোগ করল। এই তল্লাশির জল কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার।