অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল ছবি।
দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করানো হল আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাল তারা। শুক্রবার মামলাটির শুনানি হচ্ছে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে। আদালতে ঢোকার পথে সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে কেজরীওয়াল বলেন, “আমার জীবন দেশের উদ্দেশে নিবেদিত।” সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানান, জেলের ভিতর থেকেও তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।
শুক্রবার আদালতে ইডির হয়ে সওয়াল করেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় কেজরীওয়ালকে। নিয়ম মোতাবেক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। ইডি আদালতে দাবি করে যে, ‘আবগারি দুর্নীতির কিংপিন’ হলেন কেজরীওয়াল। ইডি আদালতে জানায়, অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। আপ প্রধানের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আরও জানায়, অপরাধে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কেজরীওয়াল। কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার জন্যই ওই আবগারি নীতি আপ প্রণয়ন করেছিল বলে দাবি করা হয়েছে। ইডির আরও দাবি, আবগারি ‘দুর্নীতি’র টাকা গোয়ার নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিল আপ।
দিল্লির আবগারি মামলায় আপ প্রধান কেজরীকে মোট ন’বার সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু আট বারই হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। শেষ পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরীওয়াল। হাই কোর্ট তা খারিজ করলে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। অন্য দিকে, হাই কোর্ট রক্ষাকবচ না দেওয়ার পরেই তৎপর হয় ইডি। বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেজরীর বাসভবনে যান ইডি আধিকারিকেরা। তাঁর বাড়ি তল্লাশি করেন। ইডি সূত্রে জানা যায়, কেজরীওয়ালের ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়। ঘণ্টা দুয়েকের তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের শেষে কেজরীকে গ্রেফতার করে ইডি। তখনই জানা যায় শুক্রবার তাঁকে অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) আদালতে হাজির করানো হবে।
আবগারি মামলাতেই রক্ষাকবচ চেয়ে দিল্লির নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। সেখানে তাঁর রক্ষাকবচের আবেদন মঞ্জুরও করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই রক্ষাকবচের মেয়াদ শেষ হয়। বৃহস্পতিবার নবম হাজিরার দিন কেজরীওয়াল ইডি দফতরে না গিয়ে সরাসরি দিল্লি হাই কোর্টে যান। সেখানে নতুন করে রক্ষাকবচের দাবি জানান তিনি।
কিন্তু দিল্লি হাই কোর্ট কেজরীওয়ালের আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালতে পেশ করা আবেদনে কেজরীওয়াল বলেছিলেন, “ইডি নিশ্চয়তা দিক যে, তাদের তলবে সাড়া দিলে আমার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে না।” আপের অভিযোগ, ইডির লক্ষ্য জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এত দিন ধরেও তারা এই মামলায় কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা ভোটের আগে সমন পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সুরেশকুমার কাইত এবং বিচারপতি মনোজ জৈনের ডিভিশন বেঞ্চে কেজরীওয়ালের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তবে আমরা এই পর্যায়ে মামলাকারীকে কোনও সুরক্ষা দিচ্ছি না।’’ উচ্চ আদালত রক্ষাকবচ না দেওয়ায় সন্ধ্যাতেই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেজরীওয়াল। জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জি জানান তিনি। তবে সেই শুনানি বৃহস্পতিবার হয়নি। বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ শুক্রবার কেজরীওয়ালের আর্জি শুনতে রাজি হয়। তবে শুনানির আগেই মামলা প্রত্যাহার করে নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার কেজরীওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শীর্ষ আদালতে জানান, গ্রেফতারির বিরুদ্ধে কেজরীওয়াল নিম্ন আদালতেই সওয়াল করবেন।