প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে মনমোহন সিংহ। ছবি আনন্দবাজার আরকাইভ থেকে।
বিরোধীরা কটাক্ষ করতেন ‘মৌনমোহন’ বলে। অভিযোগ তুলতেন, তিনি দুর্বল প্রধানমন্ত্রী বলেই নীতিপঙ্গুত্বের শিকার হয়েছিল সরকার। বলা হত, সেই কারণেই ভারতের রাজনীতি উপর্যুপরি দুর্নীতির সাক্ষী, যার প্রভাব পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতেও। কিন্তু আজ মনমোহন সিংহের প্রয়াণের পরে ভারতীয় অর্থনীতির উদারীকরণের মূল রূপকার হিসেবে সেই তাঁর কৃতিত্বই মেনে নিতে দ্বিধা করছেন না বিরোধী নেতারা।
মনমোহন জমানায় ওঠা একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার রাস্তা অনেকাংশে তৈরি করে দেয়। এ কথা ঠিক যে, অধিকাংশ দুর্নীতির অভিযোগই পরে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু রাজনীতিকদের মতে, সেই সময়ে বিরোধীরা ওই প্রচারকেই এমন পর্যায়ে নিয়ে যান যে, দুর্নীতি ও ইউপিএ সরকার তখন সমার্থক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় মনমোহন নিজেরই সরকারের উপর থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে প্রচারের ময়দানে ঝড় তুলেছিলেনবিজেপি নেতারা।
কিন্তু আজ সেই বিরোধী নেতারাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে, ভারতীয় অর্থনীতিকে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়ে উদারীকরণের পথে হাঁটার যে সাহস মনমোহন দেখিয়েছিলেন, তা তারিফযোগ্য। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা বলেন, ‘‘আমলা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। মনমোহন সিংহের প্রয়াণ দেশের পক্ষে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনিএক জন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক এবং ভারতীয় রাজনীতির এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জনসেবায় নিয়োজিত অসাধারণ কর্মজীবন জুড়ে তিনি নিপীড়িত মানুষের কল্যাণের জন্য সব সময়ে সরব ছিলেন।’’ দল-মত নির্বিশেষে মনমোহনের গ্রহণযোগ্যতা এবং জাতি গঠনের প্রশ্নে অনস্বীকার্য ভূমিকার কথাও মেনেনিয়েছেন নড্ডা।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সরকারে তিনি যখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন ভারতীয় অর্থনীতি ধুঁকছে। দেশে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে। দেশে সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন। বেকারত্ব বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে মনমোহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘কঠিন সময়ে দেশের অর্থনীতিকে নতুন করে গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। ভারতের অগ্রগতিতে তাঁর ভূমিকা সর্বদা মনে রাখা হবে।’’ রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও ভারতীয় অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর মূল রূপকার হিসেবে মনমোহনের ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহ এমন এক জন ব্যক্তি, যিনি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’ শোকবার্তায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, এক জন অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহনের অবদান ভোলা যাবে না।