দিল্লিতে আমলাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্র আর আপের লড়াই চলছেই। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও দিল্লির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য আমলাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে সেখানকার সরকার। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেওয়ার পরেই উচ্চপদস্থ এক আমলাকে সরিয়ে দিয়েছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ সরকার। কিন্তু আপের অভিযোগ, শীর্ষ আদালতের নির্দেশের অবমাননা করে এখনও দিল্লি প্রশাসনে নিযুক্ত আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আপ এবং কেন্দ্রের মধ্যে এই দড়ি টানাটানির আবহেই গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেন সেখানকার মুখ্যসচিব নরেশ কুমার। তাঁর জন্য রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন দিল্লির কর্মিবর্গ দফতরের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। দিল্লি সরকারের একটি সূত্র মারফত তেমনই জানা গিয়েছে। কিন্তু ‘ব্যস্ততা’র কারণে বৈঠকে হাজির হতে পারেননি মুখ্যসচিব।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পরে দিল্লি সরকারের মন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যসচিবের এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। সেই বৈঠকই ভেস্তে যায় মঙ্গলবার রাতে। তার পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে আপের তরফে দাবি করা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করছে বিজেপি সরকার। বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লির কর্মচারী বিভাগের সচিব আশিস মোরেকে আপাত গুরুত্বহীন একটি দফতরে বদলির নির্দেশ জারি করে কেজরীওয়াল সরকার। কিন্তু সে দিনের পর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান ওই আমলা, ফলে বদলি প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি।
দিল্লি সরকার সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল আশিসের সঙ্গে। কিন্তু তাঁর নাকি সন্ধানই পাওয়া যায়নি। তার ফোনও বন্ধ রয়েছে। আশিসের ‘অসহযোগিতা’র কারণে প্রশাসনিক কাজ আটকে রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে কেজরীওয়াল প্রশাসনের তরফে। দিল্লির কর্মিবর্গ দফতরের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই আমলার কৈফিয়ত তলব করে চিঠি দিয়েছেন। গত শুক্রবারই দিল্লির আপ সরকার সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করে জানায়, ওই আমলার বদলি কার্যকর করতে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অবমাননা করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, এই বিষয়ে বক্তব্য শোনার জন্য সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হবে।
দিল্লিতে ক্ষমতার রাশ কার হাতে থাকবে, কেন্দ্র না আপ সরকারের হাতে, বৃহস্পতিবার এই বিবাদের নিষ্পত্তি ঘটে সর্বোচ্চ আদালতে। দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। আদালতের তরফে জানানো হয়, ‘জনগণের ইচ্ছা’কে বাস্তবায়িত করার জন্যই নির্বাচিত করা হয় একটা সরকারকে। তাই প্রশাসনিক সমস্ত কাজেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। পক্ষান্তরে সরকারের নির্দেশ মেনে চলবেন উপরাজ্যপাল। প্রধান বিচারপতি রায়টি পড়ে শোনানোর সময় বলেন, “যদি আধিকারিকেরা মন্ত্রীদের কাছে তাঁদের কাজের ব্যাখ্যা না দেন, তবে তো যৌথ দায়িত্বের যে নীতি, তা-ই লঙ্ঘিত হবে।” তবে প্রয়োজনে উপরাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দিতে পারেন বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।