গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজস্থানে এক জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের গাড়ি থেকে ইভিএম উদ্ধার। তেলঙ্গানায় সবক’টি গণনাকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ‘শেষ রাতে’ স্ট্রংরুমে কড়া নজরদারির জন্য মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথের নির্দেশ। এমনই টানটান উত্তেজনার আবহে রবিবার সকাল ৮টা থেকে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের গণনা।
গণনার ফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই দলীয় প্রার্থীদের ‘রিসর্ট-বন্দি’ করার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত কংগ্রেসে। সূত্রের খবর, বিজেপির ‘হানাদারি’ থেকে চার রাজ্যের সদ্যজয়ী বিধায়কদের বাঁচাতে তাঁদের বিশেষ বিমানে কর্নাটক উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যদিও কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার সরাসরি এমন ‘প্রস্তুতি’র কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। চার রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে কার্যত কংগ্রেস-বিজেপির মুখোমুখি লড়াই। তেলঙ্গানায় মূল লড়াই ‘ভারত রাষ্ট্র সমিতি’ (বিআরএস)-এর সঙ্গে কংগ্রেসের। ময়দানে রয়েছে বিজেপিও।
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানার সঙ্গে মিজ়োরামের বিধানসভা ভোটের গণনাও হওয়ার কথা ছিল রবিবার। কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই খ্রিস্টান প্রভাবিত রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, গির্জাগুলির যৌথমঞ্চের দাবি মেনে গণনা-পর্ব পিছিয়ে সোমবার করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোট হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলিতে যেমন ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে, তেমনই গণনার দিনে ‘হিসাবের গরমিল’ হতে পারে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের নিশানা কেন্দ্রের শাসকদল।
বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার যে ফলাফল সামনে এসেছে, তাতে বড় চমকের পূর্বাভাস মধ্যপ্রদেশে। গত দু’দশক ধরে বিজেপি ক্ষমতায় থাকার কারণে (মাঝে বছর দেড়েক কংগ্রেসের কমল নাথ সরকার বাদ দিলে) ভোট মরসুমে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া থাকা সত্ত্বেও ফের ক্ষমতায় আসার প্রশ্নে এগিয়ে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল। অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাই জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের মানুষ ফের বিজেপিকেই ফিরিয়ে আনার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
অন্য দিকে কংগ্রেসের পক্ষে ইতিবাচক চমক হল তেলঙ্গানায় ক্ষমতা দখলের হাতছানি। যদিও সে রাজ্যে ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলে মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর নামেই যিনি পরিচিত)-এর দল বিআরএসের দিকে বিজেপি এবং হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর সমর্থন ঝুঁকতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
অন্য দুই রাজ্যের মধ্যে রাজস্থানে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। যদিও সেখানে গত সাড়ে তিন দশক ধরে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের নজির রয়েছে। বস্তুত, এর আগে তিন দফায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েও টানা দ্বিতীয় বার জয়পুরের কুর্সিতে বসা হয়নি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের।
আশির দশক থেকে ধারাবাহিক ভাবে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের প্রথা মেনে চলা রাজস্থানে সত্যিই যদি দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরাতে পারেন, তা হলে লোকসভা ভোটের আগে তা বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এর আগে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসকে মাত্র ২১টি আসনে জেতাতে পেরেছিলেন গহলৌত।
বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বিজেপি। যদিও সেখানে ভোটের আগের জনমত সমীক্ষায় অনেকটা এগিয়েছিল কংগ্রেস। ভারতে ভোটের ইতিহাস বলছে, বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল সব সময় মেলে না। কিন্তু মিলে যাওয়ার উদাহরণও কম নয়। ভোট পণ্ডিতদের একাংশের মতে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটের গতিপ্রকৃতির কিছুটা আভাস মেলে।
অতীতে মণিপুর এবং গোয়ায় ভোটগণনার শুরুতে কংগ্রেস অনেকগুলি আসনে এগিয়ে থাকার পর পরই ‘ঘোড়া কেনাবেচার’ খেলা শুরু হয়েছিল। এ বারও তেমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। এই বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ভোটযুদ্ধ। ‘দিল্লি দখলের সেমিফাইনাল’ হিসেবেই এই লড়াইকে ব্যাখ্যা করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।