গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ফের অতিমারির কালো মেঘ ঘনাচ্ছে ভারতের আকাশে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিগত কয়েক দিন ধরেই সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছিল দেশে। এ বার একধাক্কায় দৈনিক সংক্রমণ ৯৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। দীর্ঘ ৭ মাস পর এই প্রথম সংক্রমণ ফের ৯০ হাজারের কোটা পেরোল। এর আগে, গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর দেশে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৯৩ হাজার ৩৩৭। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে পরিসংখ্যান সামনে এনেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৩ হাজার ২৪৯ জন কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন। দৈনিক সংক্রমণ ১ লক্ষের কাছাকাছি হওয়ায় সব মিলিয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০৯ হয়ে গিয়েছে।
দৈনিক সংক্রমণের মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে প্রাণহানিও ঘটেই চলেছে। তবে শনিবারের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গিয়েছে। কারণ শনিবার দৈনিক মৃত্যু যেখানে ৭১৪ ছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় তা ৫১৩-য় নেমে এসেছে। সবমিলিয়ে করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত দেশে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৬২৩ জন রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতে এই মুহূর্তে মৃত্যুর হার ১.৩২ শতাংশ। আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৭৯ জন কোভিড রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রাজিলে করোনা রোগীর মোট মৃত্যুসংখ্যা ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ১৯৩।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যত সংক্রমণ ধরা পড়েছে, এর মধ্যে ৮১.৪২ শতাংশই মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং মধ্যেপ্রদেশ— এই ৮টি রাজ্য থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। দৈনিক সংক্রমণে দেশের মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র। করোনার প্রকোপে সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৪৪৭ জন। ২৭৭ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। পঞ্জাবে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। করোনার প্রকোপে ছত্তীসগড়ে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লিতে মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৬ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৮১ জন। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৫৬৭ জন। পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৭৩৬ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন রোগী।
টিকাকরণের পাশাপাশি করোনাকে পরাস্ত করতে দূরত্ব বিধি মেনে চলা, পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়ায়ও সমান জরুরি বলে ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ভারতেও টিকাকরণে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৫৬ জনকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশে এখনও পর্যন্ত টিকাকরণ হয়েছে ৭ কোটি ৫৯ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৫১ জনের। একই সঙ্গে বেড়েছে করোনা পরীক্ষাও। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭১৬ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে যা গত ৭ দিনের মধ্যে সর্বাধিক। তবে সংক্রমণের হার নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি দিন যত জনের করোনা পরীক্ষা হয়, তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যে ক’জনের নমুনা পজিটিভ আসে, তাকেই সংক্রমণের হার বলা হয়। শনিবার সংক্রমণের হার ৮.৫২ শতাংশ থাকলেও, এ দিন তা সামান্য কমে ৭.৯৯ শতাংশ হয়েছে।