Adhir Ranjan Chowdhury

অধীরের সমর্থনে মিছিল সনিয়া, রাহুল, খড়্গেদের, সাসপেনশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেস?

কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে শুক্রবার সকালে সংসদ ভবনে বৈঠক করেন দলের সাংসদেরা। রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গের পাশাপাশি অধীরও হাজির ছিলেন ওই বৈঠকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ১৫:২১
Congress slams Narendra Modi government over Adhir Ranjan Chowdhury’s suspension from Lok Sabha, says ‘fit case for going to Supreme Court’

সংসদ ভবন চত্বরে কংগ্রেস সাংসদদের প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: পিটিআই।

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর সাসপেনশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার বার্তা দিল তাঁর দল। শুক্রবার কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকের পরে সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকার গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করছে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর উপযুক্ত কারণ রয়েছে।’’

Advertisement

কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে শুক্রবার সকালে সংসদ ভবনে বৈঠক করেন দলের সাংসদেরা। রাহুল গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের পাশাপাশি, অধীরও হাজির ছিলেন ওই বৈঠকে। এর পর মিছিল করে সংসদ ভবন চত্বরে যান সকলে। বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে লোকসভাতেও অধীরের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে সরব হন কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা। বিক্ষোভের জেরে মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা। পরে অধিবেশন শুরু হলে সভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধী সাংসদেরা।

প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’র আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে বুধ এবং বৃহস্পতিবার উঠে এসেছে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীরের নাম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দিয়েছেন অধীরকে। বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির শেষে ‘অসংসদীয় আচরণের’ অভিযোগ তুলে অধীরের বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। বিরোধীশূন্য লোকসভায় সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে অধীরকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার ওম বিড়লা। সে সময় অধীর-সহ ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না-দিয়েই একতরফা ভাবে অধীরকে সাসপেন্ড করার ঘটনায় সংসদীয় বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও।

বৃহস্পতিবার সভা মুলতুবির আগে স্পিকার জানিয়েছেন, যত দিন না লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি অধীরের বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেয়, তত দিন তিনি সাসপেন্ড থাকবেন। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারেই বাদল অধিবেশনের শেষ দিন। অর্থাৎ, শুক্রবার সিদ্ধান্ত না-নিলে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদের সাসপেনশনের মেয়াদ গড়াবে অন্তত আগামী শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত। শুক্রবার খড়্গে বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে অধীরের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত স্বাধিকার রক্ষা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা। যাতে অধীর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ। এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল।’’

লোকসভায় বুধবারের বক্তৃতায় মহারাষ্ট্রের বিধবা কলাবতী বান্দুরকর সম্পর্কে ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস সাংসদ মানিকম টেগোর স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস জমা দিলেও সে বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি স্পিকার বিড়লা। এমনকি, স্পিকার নিজে অসংসদীয় আচরণের জন্য অধীরের পাশাপাশি, বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বীরেন্দ্র খটিকের নাম করেছিলেন। কিন্তু সে সময় সভায় হাজির বীরেন্দ্র ক্ষমা চাওয়ায় পত্রপাঠ তাঁকে রেহাই দেন।

অধীর তাঁর সাসপেনশনের সিদ্ধান্তকে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের মস্তানি’ বলে চিহ্নিত করে বলেন, ‘‘শুধু প্রহ্লাদ জোশী কেন, বিজেপির সব নেতা মিলে যদি আমার একটা শব্দ, একটা ব্যাখ্যা মানুষের বিচারে ‘ভুল’ প্রমাণ করতে পারেন, তবে আমি আমার রাজনৈতিক জীবন ছেড়ে দেব।’’ অধীরের দাবি, কোনও অসংসদীয় শব্দ নয়, ভাষার অলঙ্কার ব্যবহার করেছেন তিনি। অধীরের দাবি, চন্দ্রযান থেকে কুনোর চিতা পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে মোদী কথা বললেও মণিপুর প্রসঙ্গে চুপ থাকায় তিনি ‘নীরব’ শব্দ এবং ‘অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র’ উপমা ব্যবহার করেছেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার আরও মন্তব্য, ‘‘মোদী এবং শাহ ‘ইন্ডিয়া’কে ভয় পেয়েছেন।’’

পাশাপাশি, তাঁকে বার বার বক্তব্য পেশে বাধা দেওয়া হয়েছে দাবি করে অধীরের মন্তব্য, ‘‘মোদীকে যে আমরা সংসদে হাজির হতে বাধ্য করলাম, সেটা ওঁদের সহ্য হচ্ছে না।’’ এমনকি, বিজেপির উত্তরপ্রদেশের এক সাংসদ তাঁকে মারতে এসেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন অধীর। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আমাকে ক্ষমা চাইতে বলার হিম্মত ওঁদের নেই।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বহরমপুরের পাঁচ বারের কংগ্রেস সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “অধীরের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।” তিনি বলেন, ‘‘অধীরের সঙ্গে অন্যায় করা হল। বোঝা যাচ্ছে গণতন্ত্রের দুর্দিন এসেছে। অধীরের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু যে ভাবে লোকসভার বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতাকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হল, তা মেনে নেওয়া যায় না। মোদীর বিরুদ্ধে যাঁরাই বলবেন, তাঁদেরই এমন শাস্তি পেতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিয়ে অধীর মণিপুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘মণিপুর ঘুরে এসে আমার মনে হয়েছে নীরব মোদী দেশ ছেড়ে পালাননি। কারণ প্রধানমন্ত্রী এখন ‘নীরব’ মোদী হয়ে গিয়েছেন।’’ অধীরের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এনডিএ সাংসদেরা। বস্তুত, লোকসভায় হট্টগোল শুরু করে কংগ্রেসের দলনেতাকে বক্তৃতা শেষ করতেও দেননি তাঁরা । অধীরকে ক্ষমা চাইতে হবে, দাবি শাসক শিবিরের। অধীরের ওই মন্তব্য প্রথমে কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেন স্পিকার। তার পর করা হয় সাসপেন্ড।

Advertisement
আরও পড়ুন