Himachal Pradesh Crisis

মুখ্যমন্ত্রী বদলে হিমাচলে সরকার বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা কংগ্রেসের? দায়িত্ব পেলেন সেই শিবকুমার

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে হিমাচল বিধানসভায় সরকার চালানোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কাছে নেই, মঙ্গলবার রাজ্যসভা ভোটের ফলেই তা পরিষ্কার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৬
সুখবিন্দর সিংহ সুখু এবং ডিকে শিবকুমার।

সুখবিন্দর সিংহ সুখু এবং ডিকে শিবকুমার। — ফাইল চিত্র।

বুধবার সকালেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল, হিমাচল প্রদেশে সরকার বাঁচাতে তাঁকে সরাতে চলেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। কিন্তু দুপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, রাজ্যসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরেও সরে দাঁড়াচ্ছেন না তিনি। সুখু বলেন, ‘‘আমি ইস্তফা দিচ্ছি না। কেউ আমাকে ইস্তফা দিতে বলেওনি।’’

Advertisement

কিন্তু জল্পনা তাতে থামছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে হিমাচল বিধানসভায় সরকার চালানোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কাছে নেই, মঙ্গলবার রাজ্যসভা ভোটের ফলেই তা পরিষ্কার। এই পরিস্থিতিতে দলের অন্দরে ‘সুখু বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ এবং তাঁর ছেলে বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে।

হিমাচলে একটি মাত্র রাজ্যসভা আসনের ভোটে মঙ্গলবার জিতেছেন বিজেপির প্রার্থী হর্ষ মহাজন। তিনি হারান কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে। কংগ্রেসের ছ’জন-সহ অন্তত ন’জন বিধায়কের ক্রস ভোটিংয়ের জেরেই এই ফলাফল। ৬৮ সদস্যের বিধানসভায় দু’পক্ষই ৩৪টি করে ভোট পাওয়ায় লটারির মাধ্যমে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। ৬৮ আসনের হিমাচল বিধানসভায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৪০। এ ছাড়া তিন জন নির্দল বিধায়ক সুখু সরকারকে সমর্থন করছিলেন।

অন্য দিকে, বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ২৫। অর্থাৎ, সরকার পক্ষের ন’জন বিধায়ক বিজেপি প্রার্থীকে হর্ষকে ভোট দিয়েছেন। ছ’জন কংগ্রেস এবং তিন নির্দল রয়েছেন সেই দলে। ‘বিদ্রোহী’ ছ’জন কংগ্রেস বিধায়ক ভোট দিয়েই বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় চলে গিয়েছিলেন। বুধবার তাঁরা হেলিকপ্টারে শিমলায় ফেরেন। বিদ্রোহী বিধায়কদের নেতা রবি ঠাকুর এবং রাজেন্দ্র রানা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা বিজেপিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হিমাচলে রাজ্যসভার একটি আসনে সরাসরি লড়াই ছিল শাসক কংগ্রেস এবং বিরোধীদল বিজেপির। ফলে ক্রস ভোটিংয়ের কারণে কংগ্রেস প্রার্থী হেরে যাওয়ায় সরাসরি প্রশ্ন উঠেছে সুখুর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। লোকসভা ভোটের আগেই সে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটবে বলে মঙ্গলবার দাবি তুলেছে বিজেপি। বুধবার বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কেরা স্লোগান তোলেন ‘জয় শ্রীরাম, বন গয়া কাম’। বাজেট পাশ করানোর আগেই বিজেপি বিধায়কদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় সরকারকে। শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলনেতা জয়রাম ঠাকুর-সহ ১৫ জন বিজেপি বিধায়ককে বহিষ্কার করে পাশ করানো হয় বাজেট।

হিমাচলের কংগ্রেসের সরকার ফেলতে মরিয়া বিজেপি ইতিমধ্যেই আস্থাভোটের দাবি জানিয়ে রাজ্যপাল শিবপ্রতাপ শুক্লের দ্বারস্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ‘ঘর আগলানোর’ দায়িত্ব দিয়েছেন কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলকে। অতীতে, গুজরাতে বিধায়ক আগলে রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী আহমেদ পটেলকে জেতানো, কর্নাটকে সরকারের পতন আটকানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন শিবকুমার। হরিয়ানার নেতা ভূপেন্দ্রর সঙ্গে হিমাচলের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের স্ত্রীর সুসম্পর্ক রয়েছে।

সরকারের প্রধান বদলে সরকার বাঁচানোর উদ্যোগ ভারতীয় রাজনীতিতে বিরল নয়। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেসের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে এইচডি দেবগৌড়াকে সরিয়ে ইন্দ্রকুমার গুজরালকে বসিয়েছিলেন সংযুক্ত ফ্রন্ট নেতৃত্ব। ২০১০ সালে জগন্মোহন রেড্ডির বিদ্রোহ সামাল দিতে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে কোন্নিজিতি রোসাইয়াকে সরিয়ে কিরণকুমার রেড্ডিকে কুর্সিতে বসিয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। কিন্তু ইতিহাস বলছে, কোনও ক্ষেত্রেই সমাধান দীর্ঘমেয়াদি হয়নি।

আরও পড়ুন
Advertisement