Tripura BJP

ত্রিপুরা ক্রিকেটে পিস্তলের আস্ফালন কি শুধুই খেলার বিষয়? বিজেপিতে বিভাজন নিয়ে শুরু জোর আলোচনা

উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে এখন বিজেপির দু’টি গোষ্ঠী যুযুধান। এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। অন্য দিকে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ০৯:০৮
Conflict within the Tripura BJP, the clash in the Cricket Association is a reflection of that

ছবিতে (বাঁ দিকে) ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শনিবারের বারবেলায় হইচই পড়ে গিয়েছিল আগরতলায়। ত্রিপুরার রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার ‘দখল’ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল পিস্তল। সেই ঘটনায় সোমবার বিকাল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলেই খবর। কিন্তু ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিবিধ কাহিনি। যা থেকে অনেকেই বলছেন, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় দখলদারি কায়েম নিয়ে শনিবার যা ঘটেছে, তা আসলে পদ্ম শিবিরের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়া। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই গোলমাল শুরু হয়েছিল। এখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে বসেছে।

যদি‌ও বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ কিন্তু এই ধরনের ঘটনা থেকে তো এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, সরকার এবং দলের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, ত্রিপুরা বিজেপিতে এখন যুযুধান দু’টি গোষ্ঠী। ‌এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। অন্য দিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এব‌ং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। দলের মধ্যে অনেকে এমনও বলছেন, রাজ্য সভাপতি রাজীব দু’দিকে ভারসাম্য রেখে চলতে চাইছেন। রাজীবের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক নেতার কথায়, নানা কারণে তিনি ‘পক্ষ’ নিতে পারছেন না। দু’দিকেই ভারসাম্য বজায় রেখে তাঁকে চলতে হচ্ছে। তবে তাতে যে খুব লাভের লাভ হচ্ছে, তা নয়। রাজীব একটা সময়ে ছিলেন ত্রিপুরা খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তখন বিপ্লব মুখ্যমন্ত্রী। গোটা রাজ্যে রাজীব ‘বিপ্লবের লোক’ বলেই পরিচিত ছিলেন। যদিও তিনি নিজে কখনওই এই ‘পরিচিতি’ মেনে নেননি। বরাবরই বলেছেন, তিনি ‘বিজেপির লোক’।

বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে বিপ্লবকে সরিয়ে মানিককে মসনদে বসানো হয়। মানিক ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় তাঁকে সেই পদ ছাড়তে হয়। তাঁর জায়গায় রাজীবকে রাজ্য সভাপতির পদে বসান কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। যে ঘটনায় বিপ্লব শিবির ‘উল্লসিত’ হয়েছিল। কিন্তু এখন ভারসাম্য রাখতে যাওয়ায় সেই রাজীব বিপ্লব শিবিরেরও বিরাগভাজন হচ্ছেন বলে দলের অন্দরের খবর।

অনেকে ত্রিপুরা বিজেপিতে ‘কোন্দল’-এর উদাহরণ দিতে গিয়ে সরকারি বাসভবন ছাড়তে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিককে লেখা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবের চিঠির বিষয়টি তুলে আনছেন। গত ২০ জুলাই চিঠি লিখে রাজ্যসভার সাংসদ বিপ্লব জানিয়ে দেন, সরকারি বাসভবনের ‘অপ্রতুলতা’র কারণে তিনি টাইপ-৪ বাংলোটি ছেড়ে দিচ্ছেন। বিপ্লব শিবিরের বক্তব্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর যে পরিসরের বাংলো পাওয়ার কথা, তা দীর্ঘ দিন ধরে দেওয়া হচ্ছিল না। ‘প্রতিবাদ’ হিসাবেই টাইপ-৪ বাংলোটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিপ্লব। যদিও বিপ্লব নিজে তেমন কিছু প্রকাশ্যে বলেননি। যেমন প্রকাশ্যে কিছু না বললেও মানিক শিবিরের অনেকে বলছেন, নানা কারণে আগে থেকেই বিপ্লব ওই বাংলোটি ছাড়তে চাইছিলেন। এখন চিঠি লিখে নতুন করে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

ত্রিপুরা বিজেপিতে কোন্দল অবশ্য নতুন নয়। একটা সময়ে বিপ্লবের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছিলেন সুদীপ রায় বর্মন। সুদীপ অবশ্য এখন কংগ্রেসে। কিন্তু কোন্দল থামেনি। শুধু শিবির বদলে গিয়েছে। অনেকের মতে, বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থায় কোন গোষ্ঠীর দখল থাকবে, তা নিয়ে দলে বিতণ্ডা বেধেছে। তারই ফল ত্রিপুরা ক্রিকেট সংস্থায় সংঘাত থেকে পিস্তল বেরিয়ে পড়া।

ঘটনাচক্রে, ত্রিপুরার ধনপুর ও বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। ওই দুই আসনে কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়েও দলের অন্দরে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। ধনপুর থেকে বিধানসভায় জিতেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা। তিনি বিধায়কের পদে ইস্তফা দিয়ে সাংসদ পদে থেকে যান। বক্সনগরের সিপিএম বিধায়ক শামসুল হক সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। দু’টি কেন্দ্রেই উপনির্বাচন হবে। কিন্তু বিজেপির এক প্রবীণ নেতার কথায়, দুই কেন্দ্রে প্রার্থী কারা হবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে নেতাদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। যা ঘটছে, তাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও রাজ্য নেতাদের উপর খুব প্রসন্ন নন। কিন্তু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কোন্দল নিয়ে যা ঘটেছে, তা অতীতের সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বলেই মত দলের অন্দরে অনেকের। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব এতে হস্তক্ষেপ করেন কি না।

Advertisement
আরও পড়ুন