মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত ঘনীভূত হচ্ছে নয়াদিল্লিতে দু’দিনের রাজ্যপাল অধিবেশনের পর। এক দিকে আজ অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ ফের তুলে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস জানিয়েছেন, যে তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাওয়া হয়েছে, তা ভালয় ভালয় না দিলে তিনি ‘অন্য পন্থা’ দেখবেন। অন্য দিক রাজ্যপালকে বিজেপির ‘এজেন্ট’-এ পরিণত করার অভিযোগে সরব তৃণমূল নেতৃত্ব ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের সঙ্গেকথা বলে বড় মাপের আন্দোলনের কথা ভাবছেন।
রাষ্ট্রপতি ভবনে সদ্য শেষ হয়েছে রাজ্যপাল সম্মেলন। তৃণমূলের লোকসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানিয়েছেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল বিষয়টি নিয়ে আগামী দু’-এক দিনের মধ্যেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এই নিয়ে বিরোধী পক্ষ থেকে বড় ধরনের আন্দোলনে নামার কথা ভাবছেন মমতা। সে বিষয়ে তৃণমূল নেতারা আলোচনা করবেন কংগ্রেস, এসপি, ডিএমকে-সহ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে।
অন্য দিকে, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস সংবাদমাধ্যমকে আজ বলেছেন, ‘‘সরকারের কার্যকলাপ সংবিধানমাফিক হচ্ছে কিনা, তার দেখাশোনা করাটা রাজ্যপালের কাজ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থনৈতিক পরিচালন ব্যবস্থায় অনেক ছিদ্র আমি দেখতে পাচ্ছি। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া অথবা সিএজি-র মতো যোগ্য সংস্থাগুলি যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তাতেই এই সত্য সামনে চলে আসছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক নৈরাজ্য চলছে। যে অর্থ (কেন্দ্রীয়) দারিদ্র দূরীকরণের নিমিত্তে দেওয়া, তা অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সরকারের অনেক বিলাসব্যসন রয়েছে, যা এড়িয়ে যাওয়া যেত। আমি শ্বেতপত্র চেয়েছি, কারণ রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালের দায়িত্ব যে কোনও বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তথ্য চেয়ে পাঠানো। রাজ্যপালকে সেই তথ্য দিতে মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য। অপেক্ষা করছি। যদি তথ্য আসে ভাল, না হলে অন্য উপায়ে তা জোগাড় করতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্য সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিভিন্ন বিষয়ে রিপোর্ট চাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত বেধেছে। সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যপাল। তাতেওবিরোধ হয়েছে।
আজ কল্যাণ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত সাংবিধানিক প্রভিশন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত নন। রাজ্যপাল রাজ্য এবং কেন্দ্রে মধ্যে সেতুর কাজটা করতে পারেন। কিন্তু তিনি কেন্দ্রীয় এজেন্ট হয়ে রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী সেই দিকেই নিয়ে যাচ্ছেন বিষয়টাকে। তিনি সমন্বয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে মানেন না। এর ফলে দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে যাবে। ইন্ডিয়া জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা খুব দ্রুত এই নিয়ে মাঠে নামতে চলেছি।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যপালদের দু’দিনের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ, রাজ্যপালেরা ‘জনগণের রাজ্যপাল’ হয়ে উঠুন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখুন। কোনও নীতিগত বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধ হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যপালদের খোলাখুলি মত প্রকাশেও উৎসাহ দিতে চাইছে কেন্দ্র। সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রাজ্যপালদের ‘জনগণের রাজ্যপাল’ হয়ে ওঠার বিষয় রয়েছে। তাতেবলা হয়েছে, রাজ্যপালদের নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমজনতার সঙ্গে জড়িত বিষয়ে রাজ্যপালকে যথাযথ অবস্থান নিতে হবে। প্রয়োজন মাফিক রাজ্য সরকারের উপরে চাপ তৈরিকরতে হবে।