ভেঙে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়িও। মণিপুর-হিংসার একটি ছবি। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরে শান্তি ফেরাতে এ বার বিশেষ শান্তিরক্ষক বাহিনী গঠন করল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যপালের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে রাখা হয়েছে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহকেও। কমিটির সদস্য হিসাবে থাকছেন রাজ্যের সমস্ত সাংসদ, বিধায়কেরাও। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে স্থায়ী শান্তি ফেরাতে যাতে সব পক্ষের মতামত নেওয়া যায়, তার জন্য কমিটিতে রাখা হয়েছে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিবদমান জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে স্থায়ী রফাসূত্র বার করার জন্য কমিটিতে রাখা হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক, সাহিত্যিক, শিল্পী এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রের খবর, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্যমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করবে এই কমিটি। এর আগে মণিপুর-হিংসার তদন্তে ডিআইজি পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল সিবিআই। দশ সদস্যের এই তদন্তকারী দল মণিপুর-হিংসা নিয়ে রিপোর্ট জমা দেবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে। মে মাসে মণিপুর সফরে গিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত করবে বলে জানিয়েছিলেন। মণিপুরের বিভিন্ন থানায় হওয়া ৬টি এফআইআর-এর ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। এ বার সেখানকার জনগোষ্ঠীগুলির আস্থা ফেরাতে শান্তিরক্ষক কমিটি গঠন করল কেন্দ্রীয় সরকার।
গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। আদি বাসিন্দা মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে বিজেপি শাসিত মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল মোদী সরকার।
রাজ্যে অশান্তি এড়াতে নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকের ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ সিংহকে। তাঁর অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডার-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ১ মাস কেটে গেলেও হিংসা থামেনি। মণিপুর-হিংসায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। গোষ্ঠীহিংসার জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ!