সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।
প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন শুনেই মেজাজ হারালেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র হাতে গ্রেফতার হওয়া ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং মুকেশ অম্বানীর প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন ছুড়লেন, কেন তাঁর বেলাতেই টাকার অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে?
শনিবার রুটিন স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুজয়কৃষ্ণকে। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তাঁর ৬টি সংস্থায় যে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা কি সত্যি? প্রশ্ন শুনেই মেজাজ হারান সুজয়কৃষ্ণ। চোখে-মুখে বিরক্তি নিয়েই তিনি বলেন, “আমার বিনিয়োগ তো আপনার কী?” তার পরই তাঁর সংযোজন, “আমার ২০০ কোটি (টাকা) থাকতে পারে। তাতে ইডির কী? লোকের কি টাকা নেই? অম্বানী-আদানির কি টাকা নেই?” ৬টি সংস্থায় বিনিয়োগ করা অর্থে শিক্ষক নিয়োগের টাকা আছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে সুজয়কৃষ্ণ বলেন, “কোনও নেই। কোনও নেই।” তার পর তিনি বলেন, “২০০৮ সাল থেকে কাজ করছি। সব ডকুমেন্টস (তথ্য) দিয়েছি।”
গত ৩০ মে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে ইডি। রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম এসেছে গোপাল দলপতির। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় আসেন সুজয়। ৩০ মে-র আগে সিবিআই সুজয়কৃষ্ণকে দু’বার তলব করেছিল। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।
গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ৩টি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা বিশেষ করে নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর এবং অ্যাকাউন্ট্যান্টদের তলব করা হয় আগেই। এর পরেই ৩০ মে তলব করা হয় সুজয়কে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় ‘কাকু’কে।