প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
পঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনের জেরে এ বার কেন্দ্রীয় বাজেটে পিএম-কিসানের টাকা বাড়ানো নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্দরমহলে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এখন পিএম-কিসান প্রকল্পে কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। তা বাড়িয়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা করা নিয়ে নতুন করে অঙ্ক কষা হচ্ছে। সঙ্ঘ পরিবারের কৃষক সংগঠনও মোদী সরকারের কাছে এই দাবি জানিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের অন্তর্বর্তী বাজেটেও পিএম-কিসানের টাকা বাড়ানো হতে পারে বলে কৃষকদের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সংসদে প্রশ্নের উত্তরে সরকার জনিয়েছে, এমন কোনও প্রস্তাব নেই। কিন্তু পঞ্জাব, হরিয়ানায় যে ভাবে কৃষক সংগঠনগুলি ফসলের এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবিতে আন্দোলন করছে, তাতে কৃষকদের জন্য কিছু সুরাহার দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্র।
এ বার বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তাঁদের মতামত জানতে। সে সময় সঙ্ঘ পরিবারের ভারতীয় কিসান সঙ্ঘের নেতা বদ্রী নারায়ণ চৌধরি অর্থমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছিলেন, গত ছয় বছরে পিএম-কিসান প্রকল্পে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়েনি। ২০১৯-এ পিএম-কিসান বা প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্প চালু হয়েছিল। তখন থেকেই বছরে কৃষকদের ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। কৃষক নেতাদের যুক্তি, বছরে ৬ হাজার টাকার অর্থ মাসে মাত্র ৫০০ টাকা। তিন কিস্তিতে ২ হাজার টাকা করে এই অর্থ দেওয়া হয়। আজকের বাজারে যার মূল্য খুবই সামান্য।
সমস্যা কোথায়? অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখন গোটা দেশে প্রায় ১০ কোটি কৃষক পিএম-কিসান প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পে বাজেটে ৬০ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ হচ্ছে। অনুদানের পরিমাণ দ্বিগুণ করলে এই বরাদ্দের পরিমাণ ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকায় চলে যাবে। মোট কৃষিতে বরাদ্দের পরিমাণই দেড় লক্ষ কোটি টাকার মতো। ফলে কৃষি বাজেটও বাড়াতে হবে।’’
সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও সুপারিশ করেছে, পিএম-কিসানের টাকা ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হোক। পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ, ভাগচাষি, ক্ষেত মজুরদেরও পিএম-কিসানের আওতায় আনা হোক। দেশের কৃষক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতাদের অবশ্য যুক্তি, মোদী সরকার যদি ভাবে ফসলের দামের আইনি গ্যারান্টির ব্যবস্থা না করে পিএম-কিসানের টাকা বাড়ালেই আন্দোলন থেমে যাবে, তা হলে ভুল করবে। আন্দোলনের চাপে প্রত্যাহার করা তিন কৃষি আইন ঘুরপথে ফেরানোর জন্য তৈরি কৃষি বিপণন নীতিও বাতিল করতে হবে।