ফাইল ছবি।
পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, এমন তিন রাজ্যে ক্ষমতা বাড়ল সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ-এর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, এ বার পঞ্জাব, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফ গ্রেফতার, তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার কাজ করতে পারবে।
সাম্প্রতি পাক লাগোয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসএফ-এর ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই প্রবণতায় রাশ টানা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন নর্থ ব্লকের কর্তারা।
যদিও অমিত শাহের মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী নয়া নির্দেশিকায় আপত্তি জানিয়ে টুইট করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্রুত এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী।
I strongly condemn the GoI's unilateral decision to give additional powers to BSF within 50 KM belt running along the international borders, which is a direct attack on the federalism. I urge the Union Home Minister @AmitShah to immediately rollback this irrational decision.
— Charanjit S Channi (@CHARANJITCHANNI) October 13, 2021
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, জাতীয় সুরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখে সীমান্ত সংলগ্ন স্পর্শকাতর রাজ্যগুলোতে বেআইনি কার্যকলাপ রোধে এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা মানতে নারাজ অপর একটি মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, এটি রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত। বিএসএফ-এর আসল কাজ হল সীমান্ত পাহারা দেওয়া এবং অনুপ্রবেশ রোখা। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, ওই কাজ তারা সাফল্যের সঙ্গে করে উঠতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিএসএফ-এর নিত্য সমস্যা লেগে থাকার সূচনা হবে। কারণ এত দিন তাঁদের কাজের ক্ষেত্র ছিল সীমান্তের আউটপোস্ট পর্যন্ত। কিন্তু এ বার তাঁরা সেই সীমানা পেরিয়ে অন্য এলাকাতেও তল্লাশিতে যাবেন এবং প্রয়োজন মনে করলে গ্রেফতার করবেন, তা নতুন সমস্যার জন্ম দিতে পারে।’’
অন্য দিকে, বিএসএফ-এর এক আধিকারিকের পাল্টা দাবি, তাঁদের কাছে যদি নির্দিষ্ট সূত্র থেকে খবর থাকে, তা হলে তাঁরা কেন স্থানীয় পুলিশের জন্য অপেক্ষা করবেন? নতুন নিয়মে নিজেরাই অভিযান চালিয়ে দুষ্কর্ম রুখে দিতে পারবেন।
নয়া নিয়মে অসম, পঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশের মতোই তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতারের ক্ষমতা পেল বিএসএফ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত (ভারত-পাকিস্তান, ভারত-বাংলাদেশ) থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফ-কে এই বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আগে এই সীমা ছিল ১৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মনিপুর ও লাদাখে তল্লাশি এবং গ্রেফতার করতে পারবে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। ভারত-পাক সীমান্তবর্তী গুজরাতে এত দিন বিএসএফ-এর আওতায় ছিল আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৮০ কিলোমিটার এলাকা। নতুন নিয়মে তা কমিয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। আর এক পাক সীমান্তবর্তী রাজ্য রাজস্থানে অবশ্য আগের মতো ৫০ কিলোমিটারই পরিধি রাখা হয়েছে। নয়া নির্দেশিকায় উত্তর-পূর্বের ৫ রাজ্যের ক্ষেত্রে এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়নি। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের ক্ষেত্রেও সীমানা ঠিক করা হয়নি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী তিন রাজ্যে বিএসএফ-এর নয়া নিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। শুরুতেই আপত্তি জানিয়ে বিধি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে সুর চড়িয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।