শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি যে ভাবে বাংলাদেশের ‘এক জন ব্যক্তি বা একটি রাজনৈতিক দলকে রক্ষার’ জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, সে দেশের মানুষ তা ভাল ভাবে নিচ্ছে না বলে দাবি করল বিএনপি। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত বাসের মেয়াদ বৃদ্ধির খবর প্রকাশ্যে আসার পরে এ কথা জানালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরুমাহমুদ চৌধুরী।
শেখ হাসিনার ভারত বাস নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা থেকে খসরুর বক্তব্য, “আমরা অবাক এই জন্য— ভারত কেন এক জন রাজনীতিকের জন্য এতটা উঠে পড়ে লেগেছে? নয়াদিল্লির সম্পর্ক কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে না একটি রাজনৈতিক দল বা এক জন ব্যক্তির সঙ্গে? এর ফলে এমন একটা ভাষ্য তৈরি হচ্ছে তা যেমন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এগিয়ে দিচ্ছে না, বাংলাদশের মানুষের মনেও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে এ দেশে।” তাঁর কথায়, “যিনি এত মানুষের হত্যার পিছনে, লক্ষ কোটি টাকা অন্য দেশে পাচার করে দেওয়ার পিছনে, সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ডকে পাঠানোর এবং দেশের কোষাগার খালি করে দেওয়ার পিছনে, তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য পেশ করছেন, এটা একেবারেই ভাল ভাবে নেওয়া হচ্ছে না।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পীড়নের অভিযোগ নিয়ে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্যের থেকে ভিন্নসুর নয় বিএনপি। আমীর খসরুর কথায়, “ভারত সরকার সংখ্যালঘু তাস খেলছে ঠিকই, কিন্তু এ কথা বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের নৈতিকতা বোধ, অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা অনেকটাই উঁচু তারে বাধা। সেখান থেকে তাঁদের টেনে নামানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতে পারে, সমস্ত দেশেই তা ঘটে থাকে। কিন্তু তাকে দাগিয়ে দিয়ে মিথ্যা প্রচারের যে ইকো সিস্টেম তৈরি হয়েছে ভারতে, আমরা তার নিন্দা করি। আর ভারতে সংখ্যালঘুদের কী পরিস্থিত, তা নিয়ে আমরা তো কখনও মুখ খুলি না! বাবরি মসজিদ-সহ সে দেশে যা যা হয়েছে তা নিয়ে কি বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কখনও?”
বাংলাদেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ কবে ঘোষণা হবে তা এখনও স্থির হয়নি, কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটের প্রস্তুতি জেলায় জেলায় তুঙ্গে এমনটাই দাবি করছেন দলের নেতা। দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের ঢাকায় ফেরার অপেক্ষাও চলছে। খসরুর দাবি, “আমাদের দল এখন আরও শক্তিশালী। কারণ গত পনেরো বছরে বহু অত্যাচার আমরা সহ্য করেছি, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন আমাদের নেতা কর্মীরা, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুবরণ থেকে চাকরি খোয়ানোর মতো বিষয় ঘটেছে। এই আগুনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে এখন আমাদের প্রত্যয় তুঙ্গে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমেই আমাদের শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সংস্কার সংক্রান্ত রিপোর্টগুলি চূড়ান্ত হয়ে গেলে আমরা বৈঠকে বসব সরকারের সঙ্গে। তবে নির্বাচনের প্রশ্নে সরকারকে দিনক্ষণের দাবি বেঁধে দিইনি আমরা।” জামাতের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বে কি না বিএনপি জানতে চাওয়ায় আমীর খসরু বলেন, “আমাদের নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে। অন্য কোনও দলকে মাথায় রেখে ভোটে লড়াইয়ের কথা ভাবছি না। গণতান্ত্রিক অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অর্থনীতিতে সমতার দাবিতে সাহসের সঙ্গে লড়েছি, আর লড়বও।”