Digital Arrest

মোদী এত উদ্বিগ্ন কেন? চার মাসে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ ফাঁদে পড়ে ১২০ কোটি টাকা খুইয়েছেন লাখ লাখ মানুষ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীও ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সতর্ক করলেন দেশবাসীকে। কেন্দ্রের উদ্বেগ ক্রমে বৃদ্ধি করছে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’। কারণ কী?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:১৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

‘ডিজিটাল গ্রেফতার’। সাইবার প্রতারণার এক নতুন অস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশবাসীকে সাবধান করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টারও এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। কিন্তু কেন এত উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী? সাম্প্রতিক সময়ে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে পুলিশ ও তদন্তকারী আধিকারিকদের কপালে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই প্রায় ১২০ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। এই নথি শুধু সরকারি হিসাবে। যে অভিযোগগুলি জমা পড়েনি, তার হিসাব যোগ করলে প্রতারণার অঙ্ক আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার অপরাধ নথিভুক্তির পোর্টাল (এনসিআরপি)-র তথ্য অনুসারে গত কয়েক বছরে সাইবার অপরাধের প্রবণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৭ লাখ ৪০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। ২০২৩ সালে গোটা বছরে অভিযোগ জমা হয়েছিল সাড়ে ১৫ লাখের কিছু বেশি। ২০২২ সালে অভিযোগ জমা পড়েছিল সাড়ে ৯ লাখের কিছু বেশি। ২০২১ সালে ছিল তা ছিল সাড়ে ৪ লাখ। গত তিন বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, উদ্বেগ কতটা গুরুতর।

সরকারি হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ১২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই সময়ের মধ্যে লগ্নির টোপ দিয়ে প্রতারণা হয়েছে ২২২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। বন্ধুত্বের অ্যাপ থেকে প্রতারণা হয়েছে ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার। পাশাপাশি শেয়ার বাজার সংক্রান্ত সাইবার প্রতারণাতেও প্রচুর মানুষ টাকা খুইয়েছেন। ট্রেডিংয়ের টোপে ১৪২০ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে।

এর মধ্যে একেবারে নতুন প্রতারণার পন্থা হল ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’। নামের সঙ্গেই রয়েছে ‘গ্রেফতার’। প্রথম বার ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ শুনলে মনে হতেই পারে, হয়তো ডিজিটাল মাধ্যমে গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রতারকেরাও এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেন। গ্রেফতারির সঙ্গে এর দূর দূরান্তেও কোনও সম্পর্ক নেই। পুরোটাই জালিয়াতি। সাইবার প্রতারণার ফাঁদ। প্রতারকেরা ফোনকলে বা সমাজমাধ্যমে যোগাযোগ করে। নিজেদের পরিচয় দেয় পুলিশের কোনও আধিকারিক বলে। কখনও ইডি, সিবিআই বা শুল্ক দফতরের আধিকারিকের পরিচয় দিয়েও ফোন করে। ভুয়ো পরিচয়ের ফাঁদে এক বার পা দিলেই মিথ্যা মামলার ভয় দেখাতে শুরু করে প্রতারকেরা।

এই ভাবে ভুল বুঝিয়ে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। এই প্রক্রিয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইলে ভিডিয়ো কল করে প্রতারকেরা। ফোনের অপর প্রান্ত বলা হয়, “আপনাকে ডিজিটাল গ্রেফতার করা হয়েছে।” নজরদারি চালানোর জন্য ফোনে ভিডিয়ো কলে থাকতে বলা হয়। যাঁকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে, তাঁর মনে যাতে কোনও সংশয় তৈরি না হয় সেই ব্যবস্থাও আগে থেকেই তৈরি রাখে প্রতারকেরা। পুলিশের মতোই উর্দি পরে ভিডিয়ো কলে বসে প্রতারকেরা। বা কোট-প্যান্ট গায়ে কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক সেজে। প্রতারক যে ঘর থেকে ভিডিয়ো কল করে, সেই ঘরটিকেও সাজানো হয় থানার মতো করে। যাতে কারও মনে কোনও সন্দেহ না হয়। কখনও কখনও তো নেপথ্যে পুলিশের সাইরেনের শব্দও বাজিয়ে দেওয়া হয়।

সাজানো মামলাকে সত্যি বলে প্রমাণ করে প্রতারকেরা কিছু জাল নথিপত্রও দেখায়। এর পর সেই মামলা থেকে ছেড়ে দেওয়ার আশা দেখায় প্রতারকেরা। কিন্তু তার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়। লাখের কম তো নয়ই। কয়েক লাখ থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত প্রতারণা হয়েছে এক একটি ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’-এর ঘটনায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেন। সাবধান করে দিলেন ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ বলে কিছু হয় না। দেশের কোনও আইনে এই ধরনের গ্রেফতারির কথা বলা নেই। তিনি দেশবাসীকে সাবধান করে বলেন, “ডিজিটাল গ্রেফতারির জালিয়াতি থেকে সতর্ক থাকুন। আইনে এই ধরনের কোনও কিছুর উল্লেখ নেই। তদন্তের জন্য কোনও সরকারি সংস্থা কখনওই আপনার সঙ্গে ফোনে বা ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ করবেন না।”

অযথা ভয় না পেয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ফোনকলটি রেকর্ড করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভব হলে ‘স্ক্রিন রেকর্ড’ করার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জানান, কোনও সরকারি তদন্তকারী সংস্থা অনলাইনে কাউকে ধমক বা হুমকি দেয় না। পাশাপাশি যখনই এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটবে, তা ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে ফোন করে জানানোর পরামর্শ দেন মোদী। হেল্পলাইন নম্বরটি হল ১৯৩০। পাশাপাশি স্থানীয় থানাতেও এ বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement