গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
দিল্লির বিধানসভা ভোটের আগে আম আদমি পার্টি (আপ) সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিজেপি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর এবং দিল্লির বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব সোমবার আপ সরকারের বিরুদ্ধে ‘আরোপপত্র’ (‘চার্জশিট’) প্রকাশ করেছে। তাতে গত এক দশকে আপ নেতৃত্বের ‘প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা’র প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। পত্রপাঠ অভিযোগের জবাব দিয়েছেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল।
অনুরাগ সোমবার বলেন, ‘‘কেজরীওয়াল দিল্লির স্কুলগুলিকে বিশ্বমানে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’লক্ষেরও বেশি শিশু এখনও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত৷ ২৪ ঘণ্টা বিশুদ্ধ এবং বিনামূল্যে জলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ দিল্লির হাজার হাজার পরিবার টাকা খরচ করে ট্যাঙ্কার থেকে জল কিনতে বাধ্য হচ্ছে।’’ দিল্লির বায়ু এবং যমুনা নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণেও আপ সরকার শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘দিল্লিতে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার এমন হাল যে ৭০ শতাংশ মানুষ বেসরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল।’’
দুর্নীতি প্রসঙ্গেও আপকে নিশানা করে অনুরাগ বলেন, ‘‘কেজরী-সহ আট মন্ত্রী এবং ১৫ জন বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন।’’ বিজেপির আরোপপত্র প্রকাশের পরে কেজরী সংবাদসংস্থা এএনআই-কে বলেন, ‘‘বিজেপির সামনে কোনও দিশানির্দেশ নেই। তাই এমন করছে। বিদ্যুৎ, জল, মহিলাদের যাতায়াত, রাস্তা এবং আরও অনেক বিষয়ে দিল্লিবাসীদের জন্য আপ সরকার কাজ করেছে। আর বিজেপি নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপে দিল্লি অপরাধের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।’’
প্রসঙ্গত চলতি মাসেই কেজরী জানিয়েছিলেন, পাঁচ বছর আগে বিধানসভা ভোটের সময় তাঁর দল দিল্লির আমজনতাকে যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছিল, তার তিনটি পূরণ করা সম্ভব হয়নি— প্রথমত, যমুনা নদীর সাফাই এবং দূষণ রোধ। দ্বিতীয়ত, দিল্লির প্রতিটি পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং তৃতীয়ত, দিল্লির সমস্ত সড়ককে ইউরোপীয় মান অনুযায়ী গড়ে তোলা।’’ সেই ব্যর্থতার সাফাই দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে তিনটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারিনি, তার দু’টি প্রাথমিক কারণ রয়েছে। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটের পর প্রথম আড়াই-তিন বছর কোভিড অতিমারির ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সরকারে মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমিও বাদ পড়িনি।’’
দিল্লির বিধানসভা কেজরীর দল ইতিমধ্যেই দিল্লির ৭০টি আসনের সবগুলিতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ কংগ্রেস বা বিজেপি ছেড়ে আসা নেতা। কেজরীওয়াল লড়ছেন নয়াদিল্লি আসনে। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল আপ। বিজেপি পেয়েছিল আটটি আসন। আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কেজরী সাড়ে ন’বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব সামলানোর পরে গত সেপ্টেম্বরে ইস্তফা দেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন আতিশী মার্লেনা। আতিশী কালকাজী আসনে এ বারও লড়ছেন। তবে বিজেপি এখনও কোনও আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি।