Ayodhya Ram Mandir

রামায়ণের পরম্পরা আর চন্দ্রযানের সাফল্যই নতুন ভারত, বাল্মীকি-ইসরোর রামসেতুবন্ধনে নরেন্দ্র মোদী

শুরুটা বাল্মীকির সময় থেকে হলেও শেষটা তাঁর আমলের। মঙ্গলবার রামমন্দির উদ্বোধনের পরে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে মেশালেন সুচারু ভাবে। দেখালেন আগামীর স্বপ্নও।

Advertisement
পিনাকপাণি ঘোষ
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৫
After Pran Pratishtha ceremony in Ram Mandir PM Narendra Modi says about Ramayana to Chandrayaan

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

এই তিনি ত্রেতাযুগে তো পরমুহূর্তেই কলিকালে! আবার তার পরেই নতুন কালচক্রের দোরগোড়ায়। নরেন্দ্র মোদী দুই কালের সঙ্গে আগামীর রামসেতুবন্ধন করলেন।

Advertisement

রামমন্দিরে নতুন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পরে মোদী কী বলেন, তার দিকে নজর ছিল গোটা দেশের। বক্তৃতা করলেন অন্যরাও। ফলে নির্ধারিত কর্মসূচির নির্ঘণ্ট রক্ষা হল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় যে প্রাচীন ভারত, আধুনিক ভারত এবং আগামীর ভারতের মধ্যে সেতুবন্ধনের চেষ্টা থাকবে, তার খসড়া সম্ভবত আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। রবিবার অযোধ্যায় পৌঁছেই আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেছিলেন, ‘‘রামলালার বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ভারতবর্ষের পুনর্নির্মাণ অভিযানের সূচনা হবে। দ্বন্দ্ব এবং তিক্ততার অবসান হওয়া উচিত।’’

সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রচারক মোদী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে সঙ্ঘের বাণীই তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হল সোমবার। নিজেই প্রশ্ন তুললেন, ‘‘মন্দির তো হল। এ বার কী? দৈবশক্তিকে এই ভাবে বিদায় জানাব?’’ এর পরে নিজেই তার উত্তর দিলেন, ‘‘কালচক্র বদলাচ্ছে। এটা সুখের যে, এই প্রজন্মকে ভগবান কালজয়ী সময়ের জন্য বেছে নিয়েছেন। এটাই সঠিক সময়। আগামী এক হাজার বছরের ভারতের সূচনা চাই। দেশবাসী এই মুহূর্ত থেকে দিব্যভারত নির্মাণের সূচনা করুন। রামের ভাবনা মানবের সঙ্গে জনমানসে হোক। এটাই রাষ্ট্রনির্মাণের পথ হোক। রাম থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত চেতনার বিস্তার চাই।’’

একই সুর ছিল মোহন ভাগবতেরও। মোদীর আগেই তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক সচেতনতাই স্বাধীনতা আনে। মিলে চলতে হবে। সবাইকে তপস্যা করে দেশকে বিশ্বগুরু বানাতে হবে।’’

অযোধ্যায় আসার আগে মোদী মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে তামিলনাড়ুর ধনুষ্কোড়ি পর্যন্ত সফর করেছেন। গিয়েছেন রামসেতুর উৎসস্থলেও। আরিচল মুন্নাই পয়েন্টে সমুদ্রের পারে বসে প্রাণায়াম করে সৈকতে বালির উপরেই সাজিয়ে দিয়েছেন দশ রঙের ফুল-বেলপাতার নৈবেদ্য। সমুদ্রে নেমে পুজোও করেছেন মোদী। মঙ্গলবারের বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। সেই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘মহর্ষি বাল্মীকি বলেছেন, রাম দশ হাজার বছরের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। রামরাজ্য স্থাপিত হয়েছিল ত্রেতাযুগে। ত্রেতায় হাজার হাজার বছরের জন্য রামরাজ্য হয়েছিল।’’ এর পরেই আগামী হাজার বছরের জন্য ভারতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘রাম ভারতের চেতনা, চিন্তন, ভাব, নীতি। রাম বিশ্ব, বিশ্বাত্মা।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিশ্বভাবনার বক্তৃতায় মহাকাশকেও জুড়েছেন মোদী। জুড়ে দিয়েছেন ইসরোর সাফল্যকে। বলেছেন, ‘‘বসে থাকলে হবে না যুবকদের। হাজার হাজার বছরের প্রেরণা রয়েছে। সেই কারণেই চাঁদে তেরঙা পৌঁছেছে, মিশন আদিত্য সাফল্য পেয়েছে। ভারতকে নতুন দিন লিখতে হবে। এই রামমন্দির ভারতের উৎকর্ষ, বিকশিত, নতুন ভারতের সাক্ষী হবে।’’

সেই নতুন ভারতে পা রাখার জন্য কী কী করতে হবে, তার পরামর্শও ছিল মোদীর কথায়। তিনি বলেছেন, ‘‘আসুন, রাষ্ট্রনির্মাণের জন্য জীবনের পল পল (প্রতি মুহূর্ত) নিয়োগ করি আমরা। রামের পূজা স্ব থেকে সমষ্টির জন্য নিয়ে যেতে হবে। বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে সমর্পণের প্রসাদ চড়াতে হবে। রোজ রোজ রামের সেই পুজো করলেই ভারতকে আমরা পরাক্রমশালী, সমৃদ্ধশালী বানাতে পারব।’’

পুরাণ আর বিজ্ঞানের মধ্যে রামসেতুবন্ধন করেছেন মোদী। যার সূচনা রামযুগে। শেষ মোদীকালে।

Advertisement
আরও পড়ুন