Manipur Violence

মণিপুর পৌঁছে ত্রাণশিবির পরিদর্শনে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল, সাক্ষাৎ রাজ্যপালের সঙ্গেও

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন এবং কাকলি ঘোষদস্তিদার। সঙ্গে রাজ্যসভার বিদায়ী সাংসদ সুস্মিতা দেবও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ২২:২৪
5 members TMC delegation team visit violence hit areas of Manipur

ইম্ফলে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীত।

গোষ্ঠীহিংসা বিধ্বস্ত মণিপুরে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করল তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল। বুধবার দুপুরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে গিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা কুকি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাহাড়ি চূড়াচাঁদপুর জেলার পাশাপাশি মেইতেই জনগোষ্ঠী প্রভাবিত ইম্ফল উপত্যকার কয়েকটি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন।

বুধবার সকালে মণিপুর রওনা তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন দলে রয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন এবং কাকলি ঘোষদস্তিদার। রাজ্যসভার বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবও রয়েছেন ওই দলে। মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সব পক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তার পর রিপোর্ট আকারে তা তুলে দেওয়া হবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। প্রতিনিধি দলের অন্যতম সুস্মিতা বলেন, ‘‘ত্রাণশিবির গুলিতে বেশ কিছু অব্যবস্থা আমাদের নজরে এসেছে। বিশেষত, হিংসায় ঘরছাড়া পরিবারগুলির শিশুরা খুবই কষ্টে রয়েছে। আমরা সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব। কোনও বিতর্ক চাইছি না।’’

Advertisement

যদিও পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার জেরে গত সপ্তাহে বিজেপির ‘তথ্যসন্ধানী দল’ এবং বুধবার পাঁচ মহিলা সাংসদের প্রতিনিধি দলের আগমনের প্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। বিজেপির তরফে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের মণিপুর সফর নিয়ে তোলা হয়েছে প্রশ্ন। তৃণমূলের প্রতিনিধি দল বুধবার ত্রাণশিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি সে রাজ্যের নাগরিক সমাজ এবং ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছে। দেখা করেছে রাজ্যপাল অনুসুইয়া ইউকের সঙ্গেও।

সুস্মিতা বলেন, ‘‘রাজ্যপাল আমাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা করেছেন। সমস্ত রকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’’ গত মাসে মণিপুর সফরে গিয়ে চূড়াচাঁদপুর যাওয়ার সময় বাধার মুখে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে বুধবার কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে। সুস্মিতা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আরও কিছু সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁরা দেখা করবেন। বিকেলে ফিরে আসবেন কলকাতায়।

গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই কুকি, জ়ো-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই হিংসার সূচনা হয় সেখানে। এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’শো মানুষের মৃত্যু এবং ৫০ হাজারের বেশি গৃহহীন হয়েছেন। সুস্মিতা বলেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধি দল পাঠানোয় মণিপুরের বাসিন্দারা খুশি। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরের হিংসা প্রসঙ্গে এখনও মুখ খোলেননি কেন।’’

মণিপুরের প্রায় নব্বই শতাংশ পাহাড়ি জমিতেই কুকি, জ়ো, নাগা-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর বাস। তাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান। বাকি অংশ অর্থাৎ ইম্ফল উপত্যকায় মূলত রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেইরা থাকেন। অভিযোগ উঠেছে, মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের অরণ্যে নতুন জনবসতি গড়ে তুলছেন জনজাতি কুকিরা। এর ফলে আগামী দিনে তাঁদের জমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন মেইতেইরা। শুধু তা-ই নয়, এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের মাদক চক্রগুলিকে কাঁচামাল জোগানেরও অভিযোগ তুলেছে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সরকার। ফলে, বিবিধ জনজাতির মধ্যে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদল এবং সম্পদ বণ্টন ঘিরে মতবিরোধের জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে মণিপুর।

Advertisement
আরও পড়ুন