চুল স্ট্রেট করার সঙ্গে কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার কী সম্পর্ক? ছবি: সংগৃহীত।
২০২০ সালের জুন, ২০২১ সালের এপ্রিল এবং ২০২২ সালের জুলাই— যত বারই চুলে স্ট্রেটনিং করান, তত বারই জ্বর, বমি, ডায়েরিয়া, কোমর-পিঠে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয় বছর ২৬-এর এক তরুণীর। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে গেলে তাঁরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, ওই তরুণীর রক্তে ‘ক্রিয়েটিনিন’এর পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দু’টি কিডনিই বিকল হয়ে পড়েছে। রাসায়নিক দেওয়া প্রসাধনী ব্যবহার করার পর ত্বকে নানা ধরনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। তাই যে কোনও প্রসাধনী ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ‘প্যাচ টেস্ট’ করে নিতে বলা হয়। কিন্তু এই ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করার পর কিডনির সমস্যা হওয়া অত্যন্ত বিরল। চিকিৎসকেরা এই বিষয়টিকে ‘কেস স্টাডি’ হিসেবে ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশ করেছেন।
কোঁকড়ানো চুল সোজা করার জন্য ‘হেয়ার স্ট্রেটনিং’ ট্রিটমেন্ট করানোর চল নতুন নয়। শুধু চুল সোজা করাই নয়, সালোঁর পেশাদার, দক্ষ কর্মীদের হাতের ছোঁয়ায় চুলের জেল্লাও ফিরে আসে এই পদ্ধতিতে। তবে, সে সবই হয় রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহারের ফলে। সেই সমস্ত রাসায়নিক সকলের ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। তাই এগুলি ব্যবহার করার পর ত্বকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কারও ত্বকে র্যাশ বেরোয়, চুলকানি হয়। আবার কারও চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে যায়। কিন্তু, চুলে এই ধরনের ট্রিটমেন্ট করিয়ে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার মতো বিপত্তি যে কারও হতে পারে, তা হয়তো আগে কেউ শোনেনি।
ওই তরুণী জানিয়েছেন, সালোঁয় গিয়ে চুল সোজা করানোর পর পরই হঠাৎ মূত্রের মধ্যে রক্তের ছিটে আসতে শুরু করে। মূত্রনালির সংক্রমণ কিংবা কিডনির মারাত্মক কোনও সমস্যা ছাড়াই এমন উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তিনি কিছুটা ভয়ই পেয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চুল সোজা করতে সালোঁয় যে ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে গ্লায়োজ়িলিক অ্যাসিড থাকে। যে কারণে মাথার ত্বক জ্বালা করতেই পারে। কিন্তু তার সঙ্গে কিডনির কোনও যোগ আছে কি না, তা দেখার জন্য বেশ কয়েকটি ইঁদুরের উপর এই রাসায়নিক প্রয়োগ করে একটি পরীক্ষা করেছিলেন তাঁরা।
গবেষণায় অংশ নেওয়া পাঁচটি ইঁদুরের লোমে চুল স্ট্রেট করার ওই ক্রিম মাখিয়ে দেওয়া হয়। তার বেশ কিছু ক্ষণ পর গবেষকেরা ইঁদুরগুলির মূত্রের মধ্যে খুব ছোট ছোট ক্রিস্টালের মতো কিছু জিনিসের উপস্থিতি লক্ষ করেন। শুধু তা-ই নয়, ইঁদুরের শরীরে ওই প্রসাধনী ব্যবহার করার ২৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের রক্তেও ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, চুল স্ট্রেট করার ক্রিমের মধ্যে যে অ্যাসিড থাকে, তা মাথার ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এবং রক্ত দ্বারা বাহিত হয়ে তা গিয়ে পৌঁছয় কিডনিতে। ফলে কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়।