ডায়াবিটিস থাকলে কেন দাঁতের সমস্যা বেড়ে যায়? ছবি: সংগৃহীত।
দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিস রয়েছে। তাই এই রোগের উপসর্গ, লক্ষণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অনেকেরই আছে। রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসে। কেটেছড়ে গেলে তা চট করে সারতে চায় না। জল খেলেও সহজে পিপাসা মেটে না। তা ছাড়া, ক্লান্তি তো আছেই। তাই কারও এই ধরনের উপসর্গ দেখলেই তাঁকে সতর্ক করেন। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, রক্তে শর্করা বাড়তে থাকলে এমন কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যা সাধারণত ডায়াবিটিসের বলে মনে হয় না। এই উপসর্গগুলির মধ্যে অন্যতম হল দাঁতের সমস্যা।
রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে তা নিঃশব্দে নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিকল করে দিতে শুরু করে। ডায়াবেটিকদের চোখ, কিডনি, হৃদ্যন্ত্র, স্নায়ুর পাশাপাশি দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা দেখা যায়, বললেন চিকিৎসক শুভম সাহা। তাই দাঁতের নানা রকম সমস্যা শুরু হলে আপনি অযত্ন করছেন, এমনটা কিন্তু না-ও হতে পারে। এর নেপথ্যে কারণ হতে পারে ডায়াবিটিসের মতো ক্রনিক অসুখ। চিকিৎসক শুভম বলেন, ‘‘ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল ড্রাই মাউথের সমস্যা, অর্থাৎ, মুখের লালারস শুকিয়ে যাওয়া। ‘হাইপোস্যালাইভেশন’-এর কারণেই দাঁতের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। মুখের লালা গ্রন্থি থেকে অনবরত লালারসের ক্ষরণ হতে থাকে। এই লালারসই মুখের মধ্যে জমে থাকা খাবারের টুকরো, নানা জীবাণুর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিকদের মুখে লালার মাত্রা কম থাকে। তাই জীবাণুগুলির হামলা করতে সুবিধে হয়। ফলে দাঁতের গোড়া আর মাড়িতে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।’’
ডায়াবিটিস থাকলে দাঁতের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। দন্ত্যচিকিৎসক মুন চট্টরাজ বলেন, ‘‘ডায়াবিটিসের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক কমে যায়। এদের লালারসেও চিনির মাত্রা বেশি থাকে তাই, চট করে জীবাণুরা আক্রমণ করে। জীবাণুরা যে অ্যাসিড ক্ষরণ করে সেই অ্যাসিডেই দাঁতের ক্ষয় শুরু করে। সে জন্য ডায়াবেটিকদের দাঁতের বাড়তি যত্ন নিতেই হবে। ডায়াবিটিস থাকলে স্নায়ুর কার্যকারিতা ও সংবেদনশীলতাও কমে যায়। ফলে রোগীদের দাঁতে শিরশিরানি কিংবা ব্যথা চট করে তাঁরা টের পান না। আর এই কারণেই বছরে অন্তত এক বার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানো ভীষণ দরকার।’’
ডায়াবেটিকরা কী ভাবে দাঁতের যত্ন নেবেন?
১) ডায়াবিটিস থাকলে বছরে অন্তত এক বার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁতের পরীক্ষা করানো জরুরি। বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা করানো সম্ভব।
২) সারা দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করতেই হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এখন বাজারে সুগার ফ্রি টুথপেস্ট পাওয়া যায়। সেই ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। ডায়াবেটিকরা চিনিযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে কিন্তু দাঁতের ক্ষতি বেশি হবে।
৩) ব্রাশ করলেই হল না, সঠিক পদ্ধতিও জানতে হবে। ব্রাশ করার পাশাপাশি ফ্লসিং করা দরকার। দাঁতের ফাঁকে যেন খাবার আটকে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাতে ঘুমোনোর আগে ব্রাশ করতেই হবে। রাতে ঘুমোনোর সময়ে আমাদের মুখ বন্ধ থাকে, ফলে মুখে জীবাণুদের সংক্রমণ হয় না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ না করে মুখে জল দিয়ে ভাল করে কুলকুচি করে নিন। প্রাতরাশ করে নিয়ে তার পর ব্রাশ করুন।
৪) ডায়াবিটিসের রোগীদের মিষ্টি দেওয়া চটচটে খাবার (যেমন কেক, জ্যাম জেলি, পেস্ট্রি, চকোলেট, ইত্যাদি) খাওয়া নিষেধ। তবু অনেকেই মাঝেমধ্যে সেই সব নিষিদ্ধ খাবার খেয়ে ফেলেন। এই ধরনের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কুলকুচি না করলে কিন্তু মুশকিলে পড়বেন। চা, কফি খাওয়ার পরেও কিন্তু মুখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৫) ডায়াবেটিকদের যদি ধূমপানের শখ থাকলে সবার আগে সেই অভ্যাসে রাশ টানতে হবে। তামাক দাঁতের ভয়ানক ক্ষতি করে। তাই ধূমপান না ছাড়লে কিন্তু ডায়াবেটিকদের দাঁতের সমস্যা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।