সাপ, কুকুর এবং বিছে থেকে সাবধান! ছবি : সংগৃহীত
ভারতের মতো জনবহুল দেশে কুকুর, সাপ বা বিছে কামড়ানো এমন কিছু নতুন ঘটনা নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৭২ হাজার মানুষকে, কুকুরে কামড়ায়। সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা প্রায় ৪৭ হাজার। অর্থাৎ, প্রতি দিন প্রায় ১৩০ জনের মৃত্যু হচ্ছে সাপের কামড়ে। মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা।
উল্টো দিকে, আমেরিকায় জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা বছরে ১০ থেকে ১২ জন। যদিও আমেরিকার জনসংখ্যা, ভারতের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ। আবার অস্ট্রেলিয়ায় বিষাক্ত সাপের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও, সাপের কামড়ে মৃতের অঙ্কটা দশকের ঘর ছাড়ায়নি।
এই পরিসংখ্যান তুলে ধরার কারণ সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা। ভারতের মতো জনবহুল দেশের মানুষের আরও অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সচেতনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারও বিভিন্ন ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে প্রায় বিনা খরচে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। কুকুরে, সাপে বা বিছেতে কামড়ালে হাসপাতালে নিয়ে তো যাবেনই। তবে এ সব ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখা জরুরি?
কুকুর কামড়ালে
কাউকে কুকুরে কামড়ালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অ্যাণ্টি-র্যাবিস ইঞ্জেকশন নিতে হবে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল, কুকুর কামড়ালে পেটে ১৪টি ইঞ্জেকশন হয় এবং তা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। এখন চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক উন্নত। নতুন প্রজন্মের এই অ্যান্টি-র্যাবিস ইঞ্জেকশন, কুকুর কামড়ানোর দিন থেকে শুরু করে তৃতীয়, সপ্তম, চোদ্দতম এবং আঠাশতম দিন, মিলিয়ে মোট পাঁচটি ডোজ় নিতে হয়।
কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থান মাইল্ড সাবান দিয়ে, ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। কিন্তু ওই জায়গায় কোনও বাঁধন না দেওয়াই ভাল।
সাপে কামড়ালে
যদি সম্ভব হয় প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন, কোন জাতীয় সাপ আপনাকে কামড়েছে। সেটি নির্ধারণ করতে পারলে চিকিৎসা করতে অনেকটা সুবিধা হয়। বিষাক্ত সাপে কামড়ালে তৎক্ষণাৎ ওই জায়গা ফুলে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে, ক্ষতস্থানের উপরে এবং নীচে ভাল শক্ত করে বেঁধে দিন, যাতে বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। আহত ব্যক্তিকে গরম পানীয় খাইয়ে জাগিয়ে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ভেনম ইঞ্জেকশন সবচেয়ে কার্যকর।
বিছে কামড়ালে
বিছে মাত্রই বিষাক্ত, এই ধারণা কিন্তু ভুল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁকড়াবিছের হুল ফোটার পর যদি কারও অতিরিক্ত ঘাম হয়, রক্তচাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় বা বমি হয়, তা হলে সাবধান হতে হবে। বিছে হুল ফোটানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হৃদ্যন্ত্র বিকল হতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আক্রান্ত ব্যক্তি। তবে বয়স কম হলে এবং তৎপরতার সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে ‘প্রাজ়োসিন’ জাতীয় ওষুধ।