শয়নভঙ্গি কেমন হলে শরীর সুস্থ থাকবে ছবি: ফ্রিপিক।
শরীর সুস্থ রাখতে রাতে টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম যেমন জরুরি, তেমনই কোন ভঙ্গিমায় শুয়ে ঘুমোচ্ছেন, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলেন, রাতে ঘুমিয়ে উঠে সকালে সারা গা-হাত-পায়ে ব্যথা হয় অথবা ঘাড়ে এমন যন্ত্রণা হয়, যা সারা দিন ভোগায়। এই সবের কারণই হল, ভুল ভঙ্গিমায় ঘুমনো। কনসালট্যান্ট পালমোনোলজিস্ট চিকিৎসক সীতশ রেড্ডির ব্যাখ্যা, সঠিক ভঙ্গিমায় না শুলে পেশির ব্যথা যেমন ভোগাবে, তেমনই অনিদ্রাজনিত সমস্যাও দেখা দেবে। রাতে শুয়ে শ্বাসকষ্ট হয় অনেকেরই। তারও একটি অন্যতম কারণ হল ‘স্লিপ প্যাটার্ন’। ক্ষেত্র বিশেষে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যাও কিন্তু দেখা দিতে পারে এই কারণেই।
কোন কোন ভঙ্গিমায় ঘুমোনো ক্ষতিকর?
হাঁটু মুড়ে
বাঁ দিক বা ডান দিকে ফিরে দুই হাঁটু এবং দুই হাত বুকের কাছে জড়ো করে গুটিসুটি মেরে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, এই ভাবে শুলে বুকের উপর চাপ পড়ে, রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়। দিনের পর দিন এমন ভাবে শুলে পিঠে, ঘাড়ে ব্যথা তো হবেই, শ্বাসের সমস্যাও হতে পারে।
স্টমাক স্লিপিং
উপুড় হয়ে ঘুমোনোর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে মেরুদণ্ডে। পেটে চাপ দিয়ে শোয়ার ফলে শরীরের পুরো ওজনটাই পেটের উপর পড়ে। দীর্ঘ দিন এমন ভঙ্গিতে ঘুমোলে মেরুদণ্ডের ব্যথা ভোগাতে পারে। ঘাড়ের পেশিতেও টান পড়ে। ফলে ঘাড়, পিঠ এবং কাঁধের ব্যথাতেও ভোগেন অনেকে। ত্বকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে এমন ভাবে ঘুমোলে। চামড়া কুঁচকে যেতে পারে, বলিরেখা পড়তে পারে ত্বকে।
স্টারফিশ পজ়িশন
চিত হয়ে শুলে দুই হাত সোজা মাথার উপর দু’পাশে করে শোয়া অথবা দুই হাত প্রসারিত করে দুই পাশে রেখে শোয়ার অভ্যাসও ঠিক নয়। এমন ভাবে ঘুমোলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সময়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে, নাক ডাকার সমস্যাও দেখা দেবে।
ইয়ারনার স্লিপ পজ়িশন
যে কোনও এক পাশ ফিরে একটি পায়ের হাঁটু বুকের কাছে মুড়ে রেখে এবং দুই হাত সামনের দিকে প্রসারিত করে শোয়ার অভ্যাসও সঠিক নয়। দীর্ঘ দিন এমন ভাবে ঘুমোলে শরীরের ভার সমান ভাবে বিছানায় থাকে না। ফলে কাঁধের উপর চাপ পড়ে। কাঁধ, ঘাড়, ও কোমরের ব্যথা ভোগাতে পারে।
কী ভাবে ঘুমোবেন?
চিকিৎসকের পরামর্শ, বাম পাশ ফিরে ঘুমানো শরীরের জন্য ভাল। স্বাস্থ্যের দিক থেকে দেখলে, এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাঁ দিক ফিরে শুলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কম হবে, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় যাঁরা ভোগেন তাঁরা আরাম পাবেন। পাশাপাশি, পেশির ব্যথা কম হবে, হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ কম পড়বে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকলেও পাশ ফিরে শোয়া ভাল।
পাশ ফিরে কাত হয়ে শুলে ঘাড়, কাঁধের ব্যথাও কমবে। সে ক্ষেত্রে দুই হাঁটু মুড়ে বুকের কাছে আনবেন না। বরং দুই পায়ের মাঝে বালিশ রাখতে পারেন। তাতে পেশির আরাম হবে। দুই হাত প্রসারিত করে নয়, কনুই ভেঙে হাত মাথার কাছে রাখতে পারেন। তাতে কাঁধের ভার সমান ভাবে পড়বে। যদি চিত হয়ে শুতে হয়, তা হলে দুই পায়ের নীচে বা কোমরের নীচে বালিশ রেখে শুলে সমস্যা কম হবে।