অবসাদ থেকেও কিন্তু শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
সারা দিন ভারী জিনিস বইতে হয় না। তবুও শরীরে ব্যথা-বেদনা হয়, মনে ক্লেদ জমে। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি কাটাতে সালোঁয় গিয়ে স্পা করেন অনেকে। অনেকে আবার মাসাজের ভক্ত। গোটা শরীরে বেশ খানিক ক্ষণ ধরে দলাইমলাই করলে পেশির ব্যথা-বেদনা নিয়ন্ত্রণে থাকে। মনও বেশ ফুরফুরে হয়। শুধু মনের ভার, উদ্বেগ, অবসাদ লাঘব করার জন্য নানা রকম চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে বহু সালোঁয়। এখন প্রশ্ন হল, এই অবসাদ বা ক্লান্তির উৎস আসলে কোথায়, তা বুঝবেন কী করে?
আসলে শরীরের সঙ্গে মনের যোগ নিবিড়। শরীরে কিছু হলে মনের উপর প্রভাব পড়বে। আবার, মনখারাপ থাকলেও শরীর বেঁকে বসতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শরীর এবং মনের ক্লান্তি অনেকটা ‘মানিকজোড়’-এর মতো। অর্থাৎ, একটির সঙ্গে অন্যটি এমন ভাবে যুক্ত যে, এদেরকে ওই ভাবে আলাদা করা মুশকিল। স্নায়ুরোগ চিকিৎসক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, “হরমোনের হেরফের কিংবা রক্তাল্পতার মতো সমস্যা থেকেও কিন্তু শারীরিক ভাবে ক্লান্ত লাগতে পারে। আবার কোনও ঘটনায় মনের উপর অত্যধিক চাপ পড়লেও কিন্তু দেহের পেশিতে, মাথায় ব্যথা হতে পারে। অনেকের তো খিদে, ঘুমও চলে যায়।”
মানসিক ভাবে ক্লান্ত বোধ করছেন না শারীরিক ভাবে, বুঝবেন কী করে?
শরীরের বিভিন্ন প্যারামিটারগুলি যথাযথ রয়েছে কি না, আগে সেগুলি দেখে নেওয়া জরুরি। যদি সব ঠিক থাকে তা হলে ধরে নিতে হবে, সমস্যা অন্যত্র। অবসাদ থেকেও কিন্তু শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে, এমনটাই মনে করেন মনোবিদ দেবশীলা বসু। তাঁর কথায়, “আসলে দু’টি জিনিস সমান্তরাল ভাবে থাকে। কোনও কাজে অতিরিক্ত মাথা খাটাতে হলেও তার প্রভাব মনের উপর পড়তে পারে। শারীরিক ভাবে তো ক্লান্ত বোধ করতেই পারেন। এমনকি, কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না-ও করতে পারে। শারীরিক ভাবে ক্লান্ত হলে বাইরে থেকে দেখে বিধ্বস্ত লাগতে পারে। কিন্তু মানসিক ক্লান্তি তো ওই ভাবে বাইরে থেকে বোঝা যায় না! তবে গলার স্বর শুনলে বা আচরণ দেখলে বোঝা যেতে পারে।”
শরীর এবং মনকে আবার চনমনে করবেন কী ভাবে?
১) মনকে শান্ত রাখার বিবিধ পন্থা রয়েছে, সেগুলি রপ্ত করতে হবে। ধ্যান, যোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া-ছাড়ার মাধ্যমে মনে প্রশান্তি আসতে পারে।
২) সারা দিন ধরে কাজ করুন। কিন্তু কাজের মাঝে কিছু ক্ষণের জন্য হলেও বিরতি নিন। তাতে মনের একঘেয়েমি কাটবে, চোখের উপরেও চাপ পড়বে না।
৩) পর্যান্ত ঘুম হলে শরীর এবং মনের ক্লান্তি কাটে। যত কাজই থাকুক না কেন, রাতে অন্ততপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোনো আবশ্যিক। না হলে মাথাও বিগড়ে যেতে পারে।
৪) সারা দিনই কাজের মধ্যে রয়েছেন, কিন্তু কায়িক পরিশ্রম তেমন কিছুই হচ্ছে না। তাতে মনের লাভও কিছুই হচ্ছে না। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ‘এন্ডরফিন’ নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মনমেজাজ ভাল রাখতে এবং ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে।
৫) পেশা এবং ব্যক্তিগত জীবন আলাদা রাখার অভ্যাস করতে হবে। শরীর এবং মনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, এমন কাজে সরাসরি ‘না’ বলে দেওয়াই শ্রেয়।