শীতকালে সুস্থ থাকতে কী কী করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর পর থেকে রাস্তাঘাট, বাস-ট্রেন, মেট্রো, এমনকি, পাশে বসা সহকর্মীর কাছ থেকেও হাঁচি-কাশির শব্দ আসছে। কমবেশি সকলেরই যে ঠান্ডা লেগেছে, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু শীতকাল এখনও খানিক দূরে। রাতের দিকে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার দরকার হলেও আলমারি থেকে এখনও গরম পোশাক বেরোয়নি। কবে নাগাদ বার করা জরুরি, হাওয়া অফিস থেকে তেমন কোনও ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। তবে শীত যে দুয়ারে, তা বললে খুব একটা মিথ্যে বলা হয় না।
মরসুম বদলানোর এই সময় তাই সর্দি-জ্বর যেন যেতে চাইছে না। তবে একটা স্বস্তির জায়গা আছে। যেটা চিকিৎসকেরাও বলছেন। শীত পড়লে ডেঙ্গির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। এ বছর শহর এবং শহরতলি ডেঙ্গির যে চোখরাঙানি দেখেছে, শীত যত তাড়াতাড়ি আসবে, তার হাত থেকে বাঁচা তত সহজ হবে। ডেঙ্গির পাল্লা নীচে নেমে গেলেও অন্যান্য রোগের পাল্লা ভারী হয় এই সময়। হাঁচি, কাশি, জ্বর তো আছেই, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও বেড়ে যায়। শীতকালীন এই সমস্যাগুলি থেকে কী ভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় নিজেকে, জানাচ্ছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘শীতকালে বয়স্কদের হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে রাতবিরেতে এই সমস্যা বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করে। তা ছাড়া, দিনের বেলা গরম, রাতে ঠান্ডা— এই সব কারণে শীত আসার আগে থেকেই শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কো-মর্বিডিটি থাকলে এই মরসুমে বেশি সাবধানে থাকা জরুরি। যাতে হঠাৎই ঠান্ডা লেগে না যায়।’’ তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে? সুবর্ণ বলেন, ‘‘হেমন্তের এই সময়ে রাতে শিশির পড়ে। ফলে রাতের দিকে বাইরে বেরোলে মাথায় কিছু জড়িয়ে রাখলেই ভাল। বাইরে থেকে ফিরে ঠান্ডা জল খাওয়া যাবে না। গরম পোশাক না পরলেও, ফুলহাতা জামা পরতে পারলে ভাল। তাতে ঠান্ডা থেকে খানিকটা হলেও সুরক্ষিত থাকা যাবে।’’
শীত আসার আগে এই সময়ে ছাতিমফুলের গন্ধে চারদিক ভরে ওঠে। ছাতিমফুলের রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শ্বাসকষ্টের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের এই বিষয়ে খানিক সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, ছাতিমের রেণু নাকে ঢুকে হাঁপানির কষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। ছাতিমফুলের গাছ আছে, এমন জায়গায় গেলে মাস্ক পরে যাওয়া জরুরি। তা ছাড়া এই রেণু চোখে গেলে কনজাংটিভাইটিসও হতে পারে। তাই সাবধানে থাকতেই হবে। সুস্থ থাকতে খাওয়াদাওয়ায় কি কোনও নিয়ম মেনে চলা জরুরি? কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে? চিকিৎসকের পরামর্শ, ‘‘পুজোর সময়ে প্রচুর অনিয়ম হয়েছে। ফলে সেই রেশ তো একটা আছেই। এখন বাইরের খাবার খাওয়া কিছু দিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। তেল-মশলা যত কম খাওয়া যায়, তত ভাল। দোকানের খাবার কতটা টাটকা, সেটা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে যাঁদের, আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয় খাওয়া কমাতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে টক দই খেতে পারলে ভাল।’’ শীতকালে সর্দি-কাশি, জ্বর অনেকেরই হয়। তা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে সেগুলি যাতে বাড়াবাড়ি আকার ধারণ না করে, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।