উদ্বেগ কাটাতে কী কী করা ভাল। ছবি: ফ্রিপিক।
অফিসে কাজ করতে বসলেই মাথায় গিজগিজ করে হাবিজাবি চিন্তা? অল্পেই উদ্বেগ বাড়ে। মন সারা ক্ষণই চঞ্চল, অস্থির। দুশ্চিন্তা মন, মস্তিষ্ক কুরে কুরে খায়। মানস্থিক স্থিতিটাই নিংড়ে শেষ করে দেয়। তখন মনের চাপও বাড়তে থাকে। হয়তো গল্পের বই পড়তে বসলেন, দেখবেন মাথায় ঘুরছে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা। পড়াতে আর মন দিতে পারছেন না। যাঁরা লেখালিখি করেন, তাঁদেরও এমন সমস্যায় পড়তে হয়। ভাবনাচিন্তা করে কিছু লিখতে শুরু করেছেন হয়তো। দেখবেন কিছু ক্ষণ পরেই মন অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছে। গুচ্ছের চিন্তা এসে ঘিরে ধরেছে আপনাকে। অতএব লেখার দফারফা। মনঃসংযোগও একেবারেই নষ্ট।
মনোবিদেরা বলছেন, চিন্তা করুন। কিন্তু দুশ্চিন্তা নয়। দুশ্চিন্তার সময় এমন কিছু হরমোনের নিঃসরণ হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো অসুখ মাথাচাড়া দিতে পারে। তা ছাড়া মনের চাপ বাড়লে তা অবসাদের কারণও হয়ে উঠতে পারে। তা হলে কী করণীয়?
১) দুশ্চিন্তা সহজে কাটে না। একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। মনোবিদেদের পরামর্শ, কাজের সময়ে যখনই দেখবেন অকারণে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে, তখনই সেই কাজটা করবেন না। আপনার কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। বিরতি নিয়ে কাজ করুন। অনেক সময়ে একটানা কাজ করলে একঘেয়েমি থেকেও চিন্তাভাবনারা ভিড় করে মাথায়।
২) খুব জরুরি কাজ। ধরুন তাড়াতাড়ি কোনও লেখা শেষ করতে হবে অথবা কিছু পড়তে হবে। এ দিকে তখনই মন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। ৫ মিনিটের জন্য বিরতি নিয়ে চোখ বন্ধ করে একটু মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন। লম্বা শ্বাস নিন, কিছু ক্ষণ ধরে রেখে শ্বাস ছাড়ুন। কিছু ক্ষণ এমন করার পরে দেখবেন মন অনেকটা হালকা লাগছে।
৩) পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বেড়ে যেতে পারে যে কোনও মানসিক সমস্যাই। অনিদ্রা ও মানসিক সমস্যার মধ্যে একটি চক্রাকার সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ একটি সমস্যা অন্যটিকে ডেকে আনে। একই ভাবে ঘুম কমে গেলে উদ্বেগ বাড়ে। তাই দৈনিক অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম চাই-ই চাই।
৪)অহেতুক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বাড়লে অনেকেই নেশার আশ্রয় নেন। অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান উল্টে বাড়িয়ে দিতে পারে মানসিক সমস্যা। বিশেষ করে যদি আসক্তি তৈরি হয়, তবে মনের অবস্থা আরও খারাপ হয়। তাই মদ্যপান এড়িয়ে চলাই ভাল।
৫) কফিতে থাকে ক্যাফিন। এই উপাদানটি স্নায়ুকে আরও উত্তেজিত করে দেয় এবং উদ্বেগের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দুশ্চিন্তা কাটাতে কফিতে চুমুক দেওয়া কাজের কথা নয়।
৬) সারা ক্ষণ দৌড়ে চলা জীবনে ব্যায়াম করার সময়টুকুও নেই। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, দিনে মাত্র কিছুক্ষণ ব্যায়াম করতে পারলেই বহু উপকার মেলে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। এ ক্ষেত্রে শরীরের পাশাপাশি মনের উপরেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। খুব কঠিন কোনও ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। বরং সহজ কিছু ব্যায়াম যা আপনি রোজ করতে পারেন, তাই করুন। এ ক্ষেত্রে হাঁটা, দৌড়, জগিং, সাঁতার, সাইকেল চালানো কার্যকরী হতে পারে। ব্যায়াম করার পরই দেখবেন মন হালকা লাগবে। তাই দিনে অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার চেষ্টা করুন।