কানে ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছেন না গায়িকা অলকা যাজ্ঞিক। ছবি: সংগৃহীত।
কানে ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছেন না গায়িকা অলকা যাজ্ঞিক। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে গায়িকা জানিয়েছেন, একটি বিরল স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছেন তিনি আর সে কারণেই তাঁর শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। গায়িকা বলেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহ আগে বিমান থেকে নামার সময়ে মনে হয় যে, আমি কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। তার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জানতে পারি, ভাইরাসের আক্রমণের কারণে একটি বিরল স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছি। এই সমস্যার কারণে আমার শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। এটা আমার কাছে বড় ধাক্কা। আমি সমস্যাটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। দয়া করে আপনারা অমার জন্য প্রার্থনা করুন।’’
ভাইরাসের আক্রমণে কি শ্রবণশক্তি হারিয়ে যেতে পারে?
‘সাডেন সেনসারি নিউরাল হিয়ারিং লস’ এই সমস্যায় ভুগলে রোগী হঠাৎই একটি কানে শুনতে পান না। এই সমস্যার ক্ষেত্রে রোগী একটি কানের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলতে পারেন। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে আংশিক ভাবেও শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন রোগী। আনন্দবাজার অনলাইনকে চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘সাডেন সেনসারি নিউরাল হিয়ারিং লস মূলত দু’টি কারণে হতে পারে। প্রথমত, শরীরে কোনও ভাইরাস আক্রমণ করলে শরীর তার বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডিগুলি তৈরি করে, সেগুলি কখনও কখনও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে। আক্রমণ করতে পারে কানের স্নায়ুগুলির উপরেও। সেই থেকেও রোগী এক কানে শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, কোনও মাইক্রো স্ট্রোকের কারণেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত একটু বয়স্কদের হয়। তবে ঠিক কোন কারণে রোগীর ঠিক কোন কারণে ‘সাডেন সেনসারি নিউরাল হিয়ারিং লস’ যে হয়েছে, তা কোনও পরীক্ষা করেই বলা সম্ভব নয়। খুব বিরল হলেও কখনও কখনও এই সমস্যা ব্রেন টিউমারের কারণেও কিন্তু হতে পারে। এই রোগ বিরল হলেও ইদানীং কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যে কোনও বয়সেই এই রোগ হানা দিতে পারে শরীরে।’’
এই রোগের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না শুরু হলে কিন্তু এক কানের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি চলে যেতে পারে। এই সমস্যার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু না হলে কিন্তু এক কানের শ্রবণশক্তি একেবারেই চলে যেতে পারে। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, কেন কানে শুনতে পারছেন না। কেউ মনে করেন ঠান্ডা লেগেছে বলে হয়তো কান বন্ধ, কেউ আবার মনে করেন কানে হয়তো ময়লা জমেছে বলে কানে শুনতে পারছেন না, কেউ আবার ধরে নেন কানে জল ঢুকেছে বলে শুনতে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসক চিরজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘এই সমস্যা কিন্তু দু’কানে হয় না, এক কানেই শ্রবণশক্তি চলে যায়। দু’ কানের সঙ্গে নাকও যদি বন্ধ থাকে, তা হলে ধরে নিতে পারেন যে সর্দি থেকেই এই সমস্যা হয়েছ। তবে হঠাৎ এক কান বন্ধ হয়ে যাওয়া, তার সঙ্গে কানে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ, সঙ্গে মাথা ঘোরানো— এই সমস্যাগুলি একসঙ্গে হলে কিন্তু এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করা চলবে না। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময় মতো চিকিৎসা শুরু করতে পারলে কিন্তু রোগীর শ্রবণশক্তি ১০০ শতাংশ ফিরে আসতে পারে।’’
‘সাডেন সেনসারি নিউরাল হিয়ারিং লস’-এর ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে মূলত ওরাল অ্যান্টিভাইরাল আর ওরাল স্টেরয়েড দিয়েই রোগী সুস্থ হয়ে যান। তবে ওরাল অ্যান্টিভাইরাল আর ওরাল স্টেরয়েড প্রয়োগের পরেও যদি রোগীর শ্রবণশক্তি না ফেরে সে ক্ষেত্রে কানে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। রোগী দেরিতে চিকিৎসকের কাছে এলে মূলত স্টেরয়েড ইঞ্জেকশনই একমাত্র ভরসা। কখনও একটি ইঞ্জেকশনেই কাজ হয়ে যায়, কখনও আবার ৩ থেকে ৪টি পর্যন্ত ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন পড়তে পরে। চিকিৎসক চিরজিৎ বলেন, ‘‘প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে কয়েকটা অল্প দামি ওরাল অ্যান্টিভাইরাল আর ওরাল স্টেরয়েডেই কাজ হয়ে যায়। তবে অবস্থা সঙ্কটজনক হলে যে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হয় ওগুলির দাম মূলত ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। গোটা চিকিৎসা পদ্ধতিতে মোটামুটি হাজার দশেক টাকা খরচ হতে পারে, তবে পুরোটাই নির্ভর করে রোগীর পরিস্থিতির উপর।’’