পোকার প্রতীকী ছবি
ছাদের সিঁড়িতে রাখা জিন্স পরতেই আচমকা পায়ে জ্বালা করে উঠল তৃণার। দ্রুত প্যান্ট গোটাতেই বেরিয়ে এল ভীমরুল। বুঝতে বাকি রইল না, দংশন ছিল তারই। তার পর সে কী ব্যথা!
ভীমরুল হোক বা ছারপোকা, পিঁপড়ে, বোলতা, মৌমাছি, আরশোলা কিংবা মাকড়সা, পোকা কামড়ে দিতে পারে যখন-তখন। অনেক সময়ে আরশোলা বা কোনও পোকা চেটে দিলেও ত্বকের উপরে ক্ষত তৈরি হয়। এই কামড় বা ক্ষত কিন্তু মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। বিভিন্ন পোকার মুখে থাকা লালা ত্বকের সংস্পর্শে এলে হতে পারে প্রদাহ। তখনই জায়গাটি ফুলে ওঠে, ব্যথা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে কামড়ানো জায়গাটা সংক্রমিত হয়ে গেলে জ্বরও আসতে পারে।
কী সমস্যা হতে পারে?
সমস্যা তো নানা রকম হয়। তবে কয়েকটি জিনিস খেয়াল করা জরুরি। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যাওয়া, ব্যথার মতো সমস্যা হয়। কারও ক্ষেত্রে বেশ কিছু ক্ষণ পর থেকে অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইনসেক্টস বাইট বলতে মৌমাছি, ভীমরুল থেকে শুরু করে মাকড়সা, পিঁপড়ে-সহ অন্যান্য পোকামাকড় বোঝায়। মৌমাছি, ভীমরুল কামড়ালে ব্যথা বেশি হয়। হুল যদি ফুটে থাকে তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেটা বার করতে হবে। ক্ষেত্রেবিশেষ পোকা থেকে ত্বকে জ্বালা ও ক্ষত হয়। যেমন নাইরোবি ফ্লাই, যা অ্যাসিড পোকা নামেও পরিচিত, তার দেহরস ত্বকে লাগলে পোড়ার মতো জ্বালা হয়। ’’
প্রাথমিক চিকিৎসা
১) পোকা কামড়ালে প্রথমেই শরীরের সেই জায়গাটি সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার।
২) ব্যথা বাড়লে পরিষ্কার কাপড়ে বরফের টুকরো নিয়ে সেঁক দিতে হবে।
৩) প্রাথমিক ভাবে জায়গাটিতে ময়েশ্চারাইজ়ার, অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন কখন?
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, প্রাথমিক চিকিৎসার পর জ্বালা, ব্যথা না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘পোকার কামড়ে অ্যালার্জি হওয়া খুব সাধারণ বিষয়। কামড়ের স্থানটি জ্বালা করার পাশাপাশি চুলকাতে পারে। সেই সময়ে নখ দিয়ে বিষিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ হলেই ক্ষতস্থানটি আরও ফুল উঠবে। যন্ত্রণা বাড়বে।’’
কী ভাবে চিকিৎসা
সাধারণত অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ দেওয়া হয়। ক্ষতস্থানে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয় মলম। তবে জ্বর আসলে, শ্বাসকষ্ট বা আরও বেশি সমস্যা হলে ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে।
সাবধানতা
ঘরে-বাইরে, এমনকি বেড়াতে গিয়েও পোকার কামড় খেতে পারেন যে কেউ। বিশেষত জঙ্গল এলাকায়। বেশির ভাগ সময়ে কোন পোকা কামড়েছে, তা বোঝাও যায় না। শুধু জ্বালাটা টের পাওয়া যায়।
সে কারণে ঘরেও সব সময় জামাকাপড় ঝেড়ে পরা উচিত। কারণ, পোকা অনেক সময়ে জামা-কাপড়ের ভিতরে ঢুকে বসে থাকে। জুতোও ঝেড়ে নেওয়া দরকার।
বিশেষত জঙ্গল এলাকায় বেড়াতে গেলে বেশি সাবধনতা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে টুপি, ভাল জুতো, ফুলহাতা জামাকাপড় পরা দরকার। জঙ্গল এলাকায় মোজা ও জুতো সব সময় ঝেড়ে পরা উচিত। কারণ, জুতোর ভিতরে সাপ ঢুকে বসে থাকাও আশ্চর্য নয়।