কিছু কিছু সাপ্লিমেন্ট শরীরের ক্ষতি করে। প্রতীকী ছবি।
পেশিবহুল সুঠাম শরীর পেতে অথবা ত্বক ও চুলের জেল্লা ধরে রাখতে অনেকেই বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেন। কোনওটা খাওয়ার, কোনওটা ত্বকে মাখার। পুষ্টিবিদেরা বলেন, সব সাপ্লিমেন্ট সকলের শরীরের জন্য সঠিক না-ও হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলে আমরা যাচাই না করেই এবং চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়েই এই সব সাপ্লিমেন্ট কিনে ব্যবহার করতে শুরু করি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে থেকে দীর্ঘ দিন কোনও সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার ফলে মারাত্মক সব অসুখে ভুগতে হয়েছে।
এখন জেনে নিন কোন সাপ্লিমেন্টে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর বেশির ভাগই আমাদের চেনা এবং প্রায় প্রত্যেকের ঘরেই থাকে।
১) ভিটামিন ই
ভিটামিন ই আমরা কমবেশি সকলেই ব্যবহার করেছি। এই ভিটামিনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেয়ে থাকেন। আবার ত্বক ও চুলের জেল্লা বাড়াতেও ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ব্যবহার হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট সকলের জন্য নয়। দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। হার্টের ছন্দ বিগড়ে যেতেও পারে। আচমকাই হেমারেজিক স্ট্রোক হতে পারে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক জন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য সারা দিনে ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই দরকার হয়, সেটা সুষম খাবার থেকেই নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা।
বদলে কী খেতে পারেন-আমন্ড, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, মাছ, লাল ক্যাপসিকাম, ফলের মধ্যে অ্যাভোক্যাডো, আম, কিউফি ফলে ভিটামিন ই থাকে। সাপ্লিমেন্টের বদলে এগুলি খেতে পারেন।
২) বিটা ক্যারোটিন
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী। বিটা ক্যারোটিন স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। শরীরের পেশিকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে। কিন্তু বিটা ক্যারোটিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া একেবারেই ভাল নয়। গবেষণা বলছেন, যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁরা যদি নিয়মিত বিটা ক্যারোটিন সাপ্লিমেন্ট খেতে থাকেন, তা হলে ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
বদলে কী খেতে পারেন- গাজর, বিট, বাঁধাকপি, পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। তাই এই সব্জিগুলি রোজের ডায়েটে রাখতে বলেন পুষ্টিবিদেরা।
৩) ক্যালশিয়াম
হাড়ের জোর বাড়ায় ক্যালশিয়াম। আর্থ্রারাইটিস, অস্টিয়োপোরসিসের মতো বাতের ব্যথা-বেদনা হলে ক্যালশিয়াম বেশি করে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু ক্যালশিয়াম ট্যাবলেট মুঠো মুঠো খেলে তার থেকে হার্টের রোগ হতে পারে বলে সাবধান করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলে রক্ত জমাট বাঁধার রোগ হতে পারে।
বদলে কী খেতে পারেন- এক জন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম জরুরি। সাপ্লিমেন্টের বদলে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, দই, চিজ, আমন্ড, সবুজ শাকসব্জি, রাগি, সয়াবিন, মাছ, ছোলা, বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
৪) আয়রন
শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলেই রক্তাল্পতা দেখা দেবে। আয়রনের কাজই হল শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। তাই আয়রন আছে এমন শাকসব্জি, ফল বেশি করে খেতে বলেন পুষ্টিবিদেরা। আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সুষম খাবারের বদলে অনেকেই আয়রন ট্যাবলেট বা বাজারচলতি বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকেন। এর ফলও হয় মারাত্মক। গবেষণা বলছে, বেশি মাত্রায় আয়রন সাপ্লিমেন্ট শরীরে ঢুকলে তার থেকে হার্ট ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কোষ-কলা নষ্ট হতে শুরু করে।
বদলে কী জরুরি- শরীরে আয়রনের ঘাটতি হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করিয়ে জেনে নেওয়া জরুরি। তার পর চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো ওষুধ ও ডায়েট ঠিক করতে হবে। রোজের খাবারে পালং শাক, কুমড়োর বীজ, ব্রকোলি, ড্রাই ফ্রুট (যেমন কিশমিশ), অ্যাপ্রিকট, বাদাম, ডালিম, কলা, আপেল রাখলে ভাল। মুসুর ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা, মুরগির মাংসে ভাল পরিমাণে আয়রন থাকে।
৫) সেন্ট জনস ওর্ট
এটি এক ধরনের ভেষজ সাপ্লিমেন্ট, যা মানসিক অবসাদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মানসিক চাপ বা অবসাদ কমালেও এই ওষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সেন্ট জনস ওর্ট বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। যদি কেউ হার্টের রোগের ওষুধ, ডায়াবিটিসের ওষুধ খান অথবা গর্ভনিরোধক পিল খান, তা হলে এই সব ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে সেন্ট জনস ওর্ট সাপ্লিমেন্ট। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই সাপ্লিমেন্ট নেওয়া একেবারেই ঠিক হবে না।
৬) কাভা
কাভাও এক রকম ভেষজ সাপ্লিমেন্ট, যা মানসিক রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ কমাতে এই সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন অনেকে। চিকিৎসকদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে কাভা খেয়ে গেলে তার থেকে লিভারের রোগ, হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার হতে পারে। এমনকি, কাভার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লিভারের জটিল অসুখ লিভার সিরোসিস হতেও দেখা গিয়েছে। তাই সাপ্লিমেন্টের বদলে মানসিক চাপ কমাতে সুষম ডায়েট, শরীরচর্চা ও নিয়ম করে মেডিটেশন করারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা।