রোজের ডায়েটে কী কী রাখলে শরীর তরতাজা হবে। ছবি: ফ্রিপিক।
সারা দিন ব্যস্ত আমরা। সকাল থেকে শুরু হয় দৌড়। সংসার সামলে অফিসের জন্য তাড়া লেগে যায়। তার পর সকাল থেকে শুরু হচ্ছে দৌড় আর দৌড়। ট্রেনে বা বাসে চেপে অফিস। সেখানেও দিনভর কাজের চাপ। আবার ঠাসাঠাসি ভিড় ঠেলে বাড়ি।
ঘরে এসেও দু’দণ্ড জিরোবার সময় নেই। সংসারেও তখন বিস্তর কাজ। এই বুলেট ট্রেনের গতিতে চলা জীবনে ক্লান্তি চেপে বসছে শরীর ও মন জুড়ে। কাজে উৎসাহ কমছে। মনে দুশ্চিন্তার পাহাড়। মেজাজ হয়ে যাচ্ছে খিটখিটে। রোজের ব্যস্ততায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিও অধরা থেকে যাচ্ছে। ফলে শরীরও দুর্বল হচ্ছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ক্লান্তি কাটিয়ে শরীর ও মন ঝরঝরে রাখার উপায় কিন্তু আপনার হাতেই। কোনও বাজারচলতি ‘হেল্থ ড্রিঙ্ক’ লাগবে না, ‘সাপ্লিমেন্ট’ও দরকার নেই। শুধু রোজের ডায়েটে এই খাবারগুলি রেখে দেখুন। অল্প দিনেই শরীরে বল ফিরে পাবেন।
কী কী খেলে চনমনে হবে শরীর ও মন?
কলা খেতেই হবে
দ্রুত ক্লান্তি দূর করতে পারে কলা। কলায় রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট। এই সমস্ত উপাদানগুলি একত্রে মিলে শরীরের পুষ্টির পাশাপাশি শক্তিও জোগায়। কোনও রকম ‘এনার্জি ড্রিঙ্ক’, ‘এনার্জি বুস্টারের’ থেকে অনেক বেশি ভাল কলা। কলা প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে শক্তি প্রদান করে। শরীরচর্চার আগে ও পরে কলা খেলে উপকার পাবেন।
ডিমে ভরপুর পুষ্টি
ডিমের মতো সুষম খাবার দু’টি হয় না। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন এ। যে কুসুমকে আপনি অবজ্ঞা করে চলেন, সেই অংশটি খেলেও নানান উপকার মেলে। এতে থাকা ফ্যাট চটজলদি শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে। ডিম খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতিও মিটে যায়। ফলে ভিতর থেকে তরতাজা হয়।
পালং শাক দারুণ পুষ্টিকর
পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি এবং বিটা কেরোটিন আছে। কোলনের কোষকে রক্ষা করতে বিশেষ উপকারী এই শাক। মস্তিষ্কের কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে পালং শাক আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মাইগ্রেন, বাত প্রভৃতি অসুখের ডায়েটে পালং শাক রাখতে বলেন পুষ্টিবিদেরা। শরীরকে ভরপুর পুষ্টি ও শক্তি জোগায় পালং শাক।
আমন্ড খেয়ে দেখুন
একটু দামি হলেও শরীরকে শক্তি জোগাতে আমন্ডের জুড়ি মেলা ভার। সকালবেলা খালি পেটে ভেজানো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম এবং নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর এই বাদাম, নানা রকম রোগ প্রতিহত করতে সাহায্য করে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ্যা বিভাগের গবেষকদের করা একটি গবেষণা বলছে, কাঠবাদাম ভিজিয়ে রাখলে ‘লাইপেস’ নামে একটি উপাদান নির্গত হয়। যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
চিয়া বীজ
শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করতে চিয়া বীজ সিদ্ধহস্ত। এই বীজের মধ্যে থাকা খনিজ, ইলেক্ট্রোলাইটের সমতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, চিয়া বীজের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং উচ্চমানের ফাইবার, যা বিপাকহার বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে। চিয়া বীজ নিয়মিত খেলে শরীরে শক্তি হয়। অসুখবিসুখ দূরে থাকে।
ওট্সের উপকারিতা অনেক
ওট্স খেলে দীর্ঘ সময় পেটে থাকে, তাই খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে ওট্স। ফলে যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁদের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, হার্ট ভাল রাখে। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা শরীরকে পুষ্টি ও শক্তি দুই-ই জোগায়।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। ক্লান্তি কাটাতে এমন অনেক খাবারের কথা এখানে বলা হয়েছে, যা হয়তো সকলের জন্য কার্যকরী না-ও হতে পারে। অনেকেরই বিভিন্ন রকম অসুখবিসুখ থাকে। বা, খাবারে নিষেধ থাকে। ডিমের কুসুম খাওয়াতে যেমন অনেকেরই মানা। তাই কী কী খেলে আপনার উপকার হবে তা পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।