মোবাইলের ‘ব্লু লাইট’ ত্বকেরও ক্ষতি করছে? ছবি : সংগৃহীত।
চোখ জ্বালা, চোখের সমস্যা, মাথা ধরা, চোখের তলায় কালি— অনেক কিছুর জন্যই ইদানীং ‘স্ক্রিন টাইম’কে দায়ী করা হয়। অথচ গতির দুনিয়ায় যেখানে স্মার্টফোনেই বিশ্বদর্শন, সেখানে স্ক্রিন থেকে চোখ তোলার সময় কই! জীবিকার প্রয়োজনেও কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের ডিজিটাল পর্দায় টানা চোখ পাততে হয়। গবেষণা বলছে, সেই অভ্যাস আমাদের দ্রুত বুড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ যা-ই হোক, বাধ্যবাধকতা বা আসক্তি— স্মার্টফোন, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের ডিজিটাল পর্দা থেকে নির্গত ব্লু লাইট, দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই ক্ষতি করছে ত্বকের। ঠিক যেমন সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে, কতকটা সে ভাবেই ডিজিটাল পর্দার ‘নীল আলো’ও ত্বকের কোলাজেনের ক্ষতি করে।
গবেষণা যা বলছে
ত্বকের গভীরে প্রবেশ: স্মার্টফোন বা ডিজিটাল পর্দা থেকে নির্গত নীল আলো ত্বকের ক্ষতি করে কি না তা নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছিল ২০১০ সালে। ‘মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ পোল্যান্ড’-এর ত্বক চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভাগের করা সেই গবেষণা প্রকাশিত হয় ‘জার্নাল অফ ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি’-তে। তাতে বলা হচ্ছে, ডিজিটাল পর্দার নীল আলো সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির থেকেও ত্বকের বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি, ত্বকের যে স্তরে তারুণ্যের দুই মূল উপাদান কোলাজেন আর ইলাস্টিন থাকে, সেই ডার্মিসকেও ছুঁয়ে ফেলতে পারে ‘ব্লু লাইট’।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস: ২০১৪ সালে ফ্রি র্যাডিকাল বায়োলজি এবং মেডিসিন পত্রিকায় প্রকাশিত আরও একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, ডিজিটাল পর্দার আলো ত্বকের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। যার ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারে।
কোলাজেন: বেশ কিছু গবেষণায় এমনও দাবি করা হয়েছে যে, ব্লু লাইট কোলাজেন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
ত্বকের চিকিৎসক যা বলছেন
ত্বকের চিকিৎসক প্রবীণ বানোদকর অবশ্য মনে করেন, ত্বকের বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্লু লাইট মেধাশক্তিকেও ‘বৃদ্ধ’ করে দেয়। মস্তিষ্কের উপরও প্রভাব ফেলে ডিজিটাল পর্দা থেকে নির্গত আলো। তিনি বলছেন, ‘‘স্মার্টফোন-সহ যে কোনও ডিজিটাল পর্দা থেকে নির্গত ওই ব্লু লাইট উচ্চশক্তিসম্পন্ন স্বল্প তরঙ্গের আলো। সূর্যই সেই আলোর মূল উৎস, কিন্তু দিনভর পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে বলা যেতে পারে, আমরা অতিরিক্ত সূর্যের আলোই পাচ্ছি। যা চাইলে এড়ানোও যেতে পারত।’’
কী কী করা যেতে পারে?
সুখবর হল, ব্লু লাইটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মানুষের হাতেই। চাইলে ক্ষতিকর ব্লু লাইটের প্রভাব থেকে বাঁচা যেতে পারে।
১। চিকিৎসক বানোদকর বলছেন, ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করে তার ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো যেতে পারে।
২। কাজের প্রয়োজনে এবং সামাজিকতার প্রয়োজনে যোগাযোগ রাখা জরুরি। তাই স্ক্রিনটাইম বেশি হলে ত্বকের যত্নও নিন। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই রয়েছে এমন ত্বক পরিচর্যার জিনিস ব্যবহার করুন।
৩। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে রাখুন (ঘুমোনোর সময় ছাড়া অন্তত ২ ঘণ্টা) যখন আপনি ফোনের পর্দায় বা ল্যাপটপ-কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রাখবেন না। একে বলে ডিজিটাল ডিটক্স।
৪। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এবং সময় মতো ঘুমোলেও ক্ষতি এড়ানো যেতে পারে বলে পরামর্শ চিকিৎসকের।