নতুন বছরেও বিক্রিবাটা নিয়ে আশাবাদী স্বর্ণ শিল্পমহল। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছরের গোড়ায় কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৬৪,১৫০ টাকা। বছর শেষে দাঁড়িয়েছে ৭৬,৭৫০ টাকায়। গত ৩০ অক্টোবর তা ৮০,২০০ ছুঁয়ে নজির গড়েছিল। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তার পরেও ২০২৪-এ সোনার ব্যবহার ২০২৩-এর তুলনায় বেড়েছে। ফলে নতুন বছরেও বিক্রিবাটা নিয়ে আশাবাদী স্বর্ণ শিল্পমহল।
শিল্পের মতে, ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট বহাল থাকায় সার্বিক অনিশ্চয়তা চাহিদা বাড়িয়ে সোনার দামকে এ বছরও বিপুল বাড়িয়ে দেবে কি না, প্রশ্ন থাকছেই। গত বছর পাকা সোনা বেড়েছে ১২,৬০০ টাকা। ২০২৩-এ বেড়েছিল ৮০০০ টাকা। সেই অনুসারে দামি হয়েছে গয়নার সোনাও। ২০২৪-এ তা ৬১,০০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২,৯৫০ টাকা। নজির গড়ে এক সময় উঠেছিল ৭৬,২৫০ টাকায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জিএসটি ধরে দাম আরও ৩% বেশি। এই পরিস্থিতিতে গত বছর (নভেম্বর পর্যন্ত) লগ্নি এবং গয়না তৈরি ধরে দেশে মোট সোনার ব্যবহার ২০২৩-এর থেকে ৯০.৫৪ টন বেড়েছে। আমদানিও ৫৬৭.৬৭ টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫৮.২১ টন।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর সব্যসাচী রায় বলেন, “সোনা দামি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। ফলে সর্বত্রই বেশির ভাগ ক্রেতা ঝুঁকেছেন হালকা ওজনের গয়নায়। অনেকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ২২-এর থেকেও কম ক্যারাটের গয়না কিনছেন। বিয়ের ক্ষেত্রে বিকিয়েছে ২২ ক্যারাটের হালকা গয়না।’’ পাইকারি গয়না বিক্রেতা চিত্তরঞ্জন পাঁজার দাবি, “দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছর টাকার অঙ্কে গয়নার ব্যবসা বেড়েছে। তবে কমেছে বিক্রির পরিমাণ।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ২০২৪-এ সোনার দাম এতটা বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীনই পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা বাড়ে। ফলে লগ্নিকারীদের একাংশ আঁকড়ে ধরেন সুরক্ষিত লগ্নি হিসেবে গণ্য সোনাকে। ফলে দাম ক্রমশ চড়ে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জিতে এলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পদক্ষেপ করবেন। তাঁর কথা রাখার উপরে অনেকটাই নির্ভর করবে সোনার দাম।
তবে অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে-র বক্তব্য, “গত জুলাইয়ে সোনায় আমদানি শুল্ক কমার ফলে দাম ১০ গ্রামে প্রায় ৫০০০ টাকা কমেছিল। এতে গয়না বিক্রিও বেড়েছিল প্রায় ২৫%। তবে পরে ফের দাম বাড়তে শুরু করে। আগামী বছরও দাম কমবে বলে মনে হয় না। এমন নজির কম।’’ ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের গবেষণা বিভাগের কর্তা জুয়ান কার্লোস আর্টিগাসের ধারণা, “বিভিন্ন দেশ সুদ কমালে বা মূলধবনী বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লেও সোনায় লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ফলে দাম আরও বাড়তে পারে।’’ এ দিকে, নতুন বছরে সোনার ১০০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের বারে হলমার্ক চালু হবে বলে জানান বুলিয়ন মার্চেন্ট জেজে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা।