Saif Ali Khan attacked

সইফের শরীরে ছ’বার ছুরিকাঘাত, শিরদাঁড়ার কাছে গভীর ক্ষত, কতটা বিপজ্জনক হতে পারে এমন আঘাত?

মেরুদণ্ডের কাছে ও স্নায়ুতেও চোট রয়েছে সইফের। আপাতত সঙ্কট কেটেছে বলে জানা গেলেও, শিরদাঁড়ার কাছে বা সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত লাগলে তা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা নিয়ে বিশদে বললেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৮
Saif Ali khan was attacked and stabbed near spine, know how this injury can effects

সুষুম্নাকাণ্ডের কাছেই ছুরির আঘাত, কতটা ভয়ানক হতে পারে? ফাইল চিত্র।

লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সইফ আলি খানের। হাসপাতালের অন্যতম শীর্ষ পদাধিকারী ডাক্তার নীরজ উত্তমানি জানিয়েছেন, অভিনেতার শরীরে ছ’টি ক্ষত রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ক্ষত গভীর। শিরদাঁড়ার কাছেও আঘাত পেয়েছেন সইফ। তাঁর স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্নাকাণ্ড কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মেরুদণ্ডের কাছে ও স্নায়ুতেও চোট রয়েছে সইফের। আপাতত সঙ্কট কেটেছে বলে জানা গেলেও, শিরদাঁড়ার কাছে বা সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত লাগলে তা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা নিয়ে বিশদে বললেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

স্পাইনাল কর্ড হল সুষুম্নাকাণ্ড, এটি শিরদাঁড়ার আবরণের ভিতরে থাকে। সুষুম্নাকাণ্ডে গভীর আঘাত লাগলে বা ক্ষত তৈরি হলে তা মারাত্মক পর্যায়ে যেতে পারে। এই বিষয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ কর বলেন, “শিরদাঁড়ার কোথায় আঘাত লেগেছে, তা জানা খুব জরুরি। যদি ঘাড়ের কাছে বা সার্ভাইকাল কর্ডের কাছে আঘাত লাগে, তা হলে রোগী পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। মৃত্যুও হতে পারে। আবার যদি নীচের অংশে আঘাত লাগে বা ক্ষত তৈরি হয়, তা হলে দুই পায়ের উপর তার প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি ক্ষতি হবে পেশিরও। ব্লাডার বা মূত্রথলিতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখে শিরদাঁড়া। এতে প্রতি জোড়া ভার্টিব্রা বা কশেরুকা একটি ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক দিয়ে আলাদা করা থাকে। এটা অনেকটা ডিমের কুসুমের মতো, যার বাইরের খোলসটা সুতোর মতো, যাকে বলে অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস। আর ডিমের কুসুমের মতো থলথলে অংশটি নিউক্লিয়াস পালপোসাস। এটাই শক অ্যাবজ়র্বার বা ঝাঁকুনি রোধক হিসেবে কাজ করে। কোনও কারণে এই অংশে যদি ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে বা গভীর ক্ষত তৈরি হয়, তা হলে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। পঙ্গুত্ব তো আসবেই, স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও বড় প্রভাব পড়বে। পূর্ব বর্ধমানের উপমুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, “শিরদাঁড়ার হাড়ে আঘাত লাগলে যন্ত্রণার স্রোত বয়ে যাবে। এই যন্ত্রণা সহজে কমার নয়। মেরুদণ্ড বেঁকে যেতে পারে, রোগী সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা বসতে পারবেন না। ওজন তুলতে সমস্যা হবে। হাঁটাচলাও ঠিক ভাবে করতে পারবেন না। সেই সঙ্গেই টান ধরবে পেশিতে। আঘাত যদি শরীরের উপরের দিকে শিরদাঁড়ার কাছাকাছি হয়, তা হলে ঘাড়, বুক, পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত লাগার পরে রোগীকে কী ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা-ও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকেদের মতে, ঠিক পদ্ধতিতে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা, ঠিকমতো শোয়ানো, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বার করে হাসপাতালের শয্যায় নিয়ে যাওয়া— এগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভুল হলে রোগীর সুস্থ জীবনে ফেরার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। কারণ, সুষুম্নাকাণ্ডের উপরের দিক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে তার জের পড়তে পারে ফুসফুসের উপরেও। ফুসফুসের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্বাস চলাচলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আঘাত যদি গুরুতর হয় তা হলে ‘ডায়াফ্র্যাগমাটিক প্যারালিসিস’-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।

সংক্রমণেরও আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সইফের শরীরের ভিতর থেকে ২ থেকে ৩ ইঞ্চির মতো ধারালো ধাতব অংশ অস্ত্রোপচার করে বার করা হয়েছে। অনিমেষবাবু জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অস্ত্রোপচারের অনেক পরে ওই অংশে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয়েছে। যদি রক্তক্ষরণ বেশি হয়, দীর্ঘ সময় ধরে ধাতব অংশ শরীরে গেঁথে থাকে, তা হলে সেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়।

সইফ আপাতত সঙ্কট খানিকটা কাটিয়ে উঠেছেন বলেই হাসপাতাল সূত্রের খবর। তবে জখম গুরুতর। তাঁর পরিস্থিতির কথা শুনে চিকিৎসকদের মন্তব্য, এমন আঘাত থেকে পুরো সুস্থ হয়ে উঠতে বেশ খানিকটা সময় লাগে।

Advertisement
আরও পড়ুন