মোবাইলের ব্যবহার নিয়ে সমীক্ষা, কী উঠে এল এতে? ছবি:ফ্রিপিক।
না খেয়ে, ঘুমিয়ে একটা রাত কাটানো যায়। কিন্তু মোবাইল ছাড়া ১ ঘণ্টা থাকা অসম্ভব অনেকের কাছেই। কম বয়সি ছেলেমেয়েদের মোবাইলে আসক্তি এই মুহূর্তে বিশ্ব জুড়ে মাথাব্যথার কারণ। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, মোবাইলের সেটিং-এ সামান্য একটু বদল আনলেই বদলে যেতে পারে অনেক কিছু। সাময়িক ‘ডিজিটাল ডিটক্সিফিকেশন’-এ উন্নতি হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্যের, বাড়তে পারে মনঃসংযোগের ক্ষমতা।
জীবন, মনোজগতে মোবাইলের প্রভাব নিয়ে বিশ্ব জুড়েই নানা গবেষণা, সমীক্ষা চলছে। তবে আমেরিকা এবং কানাডার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি সমীক্ষা এ নিয়ে দিশা দেখাচ্ছে। আইফোন ব্যবহারকারী ৩২ বছরের আশপাশের বয়সের ৪৬৭ জনকে এ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বলা হয়েছিল, ফোন করা বা বার্তা পাঠানোয় কোনও অসুবিধা নেই, তবে বন্ধ করে দিতে হবে ইন্টারনেটের ডেটা আদানপ্রদানের সেটিং। দু’সপ্তাহ বাদে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেন, যাঁরা এই কাজটি করেছেন তাঁরা তুলনামূলক ভাবে আনন্দে দিন কাটিয়েছেন। কাজে মন দিতেও তাঁদের সুবিধা হয়েছে।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা সমীক্ষক দলের প্রধান অ্যাড্রিয়ান ওয়ার্ড বলছেন, ‘‘মোবাইল জীবনে বড় বদল এনেছে বটে, কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যই বলছে, মানুষের সাধারণ মানসিকতা একই রয়েছে।’’
কী ভাবে হয়েছিল সমীক্ষা?
এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল টানা দু’সপ্তাহ। তার পরে কম্পিউটারে তাদের একটি কাজ করতে বলা হয়। তাতেই দেখা গিয়েছে, তাঁদের মনঃসংযোগের ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে।
ফলাফল কী বলছে?
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই দিনে অন্তত ৫ ঘণ্টা ফোন নিয়ে সময় কাটান। আমেরিকার বাসিন্দাদের অনেকেই মেনে নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সময়টা কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি হয়। গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন, সর্ব ক্ষণ যাঁরা মোবাইলে বুঁদ হয়ে রয়েছেন, তাঁদের যদি সেই আবহ থেকে সরানো হয়, মনোজগতে ঠিক কেমন প্রভাব পড়তে পারে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একটি দলকে ২ সপ্তাহ ইন্টারনেটের ব্যবহার বন্ধ রাখতে বলা হয়। তার পর আবার আগের মতোই তাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি পান। অন্য দল, ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। তাতেই দেখা গিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করার ফলেই ধীরে ধীরে বদল আসছে। তাঁরা পরিবারকে বাড়তি সময় দিচ্ছেন, অনেক বেশি উৎফুল্ল রয়েছেন। মনঃসংযোগের ক্ষমতাও বাড়ছে এতে।
গবেষকের কথায়, ‘‘আমরা জানতে চেয়েছিলাম, আজকের মানব জীবনে বিশ্বসংসারের সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কি অনিবার্য? সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মোটেই তা নয়।’’
দেখা গিয়েছে, দিনে ৩-৫ ঘণ্টাও যদি কেউ সমাজমাধ্যম, ই-মেল, বা ইন্টারনেটের জগৎ থেকে বিরতি নেন, তাঁদের মেজাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডিজিটাল মিডিয়া দীর্ঘ ক্ষণ ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করছে ইন্টারনেট জগত থেকে নেওয়া এই বিরতি।
বিষয়টি সহজ নয়
কারও কারও ইন্টারনেট আসক্তি এতটাই বেশি যে, দু’সপ্তাহ তাঁরা এই শর্ত মেনে চলতে পারেননি। তবে যাঁরা পেরেছেন, তাঁদের মনোজগতে, আচরণে বদল নজরে এসেছে।
কী ভাবে দৈনন্দিন জীবনে এই ভাবনা কাজে লাগাবেন?
· মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয় যে সব অ্যাপ, নোটিফিকেশন, সেগুলি কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও বন্ধ রাখুন।
· ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করে দিন।
· পছন্দের অন্যান্য কাজ, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোয় গুরুত্ব দিন।