Cancer Causing Viruses

চেনা চার অসুখ বদলে যেতে পারে ক্যানসারে! জাঁদরেল জীবাণুদের জব্দ করার উপায় বললেন গবেষকেরা

মুখগহ্বর থেকে পাকস্থলী, যকৃৎ থেকে জরায়ু— যে কোনও অঙ্গেই মারণরোগ বাসা বাঁধার কারণ কোনও না কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া। সাধারণ রোগজীবাণুর থেকে এদের চরিত্র আলাদা। এই জীবাণুদের চিনে রাখা খুব জরুরি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৫৪
New Study says 13 percent of Cancers linked to these Bacteria and viruses

যে কোনও অঙ্গেই মারণ রোগ বাসা বাঁধার কারণ কোনও না কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া। প্রতীকী ছবি।

শরীরের যে কোনও অঙ্গে সামান্য সংক্রমণই পরবর্তী কালে বদলে যেতে পারে মারণরোগে। লিভারের রোগ কখন যে লিভার ক্যানসারের রূপ নেবে, তা আগে থেকে আঁচ করা যায় না অনেক সময়েই। মুখগহ্বর থেকে পাকস্থলী, যকৃৎ থেকে জরায়ু— যে কোনও অঙ্গেই মারণরোগ বাসা বাঁধার কারণ কোনও না কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া। সাধারণ রোগজীবাণুর থেকে এদের চরিত্র আলাদা। অথবা বলা যেতে পারে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে বাঁধতে এরা তাদের চরিত্র, থুড়ি, জিনের সাজসজ্জা বদলে ফেলে আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। এই ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ারা খুব দ্রুত বিভাজিত হতে পারে। মানুষের শরীরে ঢুকলে দেহ কোষের অনিয়মিত বিভাজন ঘটিয়ে তারা টিউমার কোষ তৈরি করে ফেলে, যা ক্যানসারের কারণ হয়ে ওঠে।

Advertisement

‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ’ তাদের সাম্প্রতিকতম গবেষণাপত্রে জানিয়েছে, এমন চার ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে যাদের জব্দ করতে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে বিজ্ঞানী মহলকেও। এই চার জীবাণুই শরীরের নানা অঙ্গে ক্যানসারের বীজ বপন করছে। কী ভাবে তাদের ঠেকানো সম্ভব, তার সম্ভাব্য কিছু উপায়ও বলেছেন গবেষকেরা।

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে নিয়ে হিমশিম বিশ্ব

এই ভাইরাসের প্রায় ২০০ রকম উপপ্রজাতি আছে, যা বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। বিশেষ করে মহিলাদের জরায়ুমুখের ক্যানসার বা সার্ভিক্যাল ক্যানসারের অন্যতম কারণ এই ভাইরাস। জননতন্ত্র ও মুখগহ্বরের ক্যানসারের কারণও এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস)। এইচপিভি ভাইরাসের দু’টি জিন ই৬ ও ই৭ শরীরে ঢুকলে জরায়ুর কাছে অনিয়মিত কোষের বিভাজন শুরু হয়। ভাইরাল প্রোটিন ধীরে ধীরে ডালপালা মেলতে শুরু করে। জরায়ুর নীচের অংশ যোনির সঙ্গে যুক্ত, সংক্রমণ হয় এখানেই। ১৫ থেকে ২০ বছর এই ভাইরাস শরীরে টিকে থাকতে পারে। অসুরক্ষিত যৌন মিলন, এইচআইভি থাকলে বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হয়।

চিকিৎসা কী?

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য এইচপিভি প্রতিষেধক রয়েছে। আমেরিকায় ১১ বছরের পর থেকে এই টিকা দেওয়া যায়। ভারতে জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য টিকা আনার চেষ্টা চলছে। শুধু টিকাই নয়, জরায়ুমুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হতে পারে প্যাপ স্মিয়ার নামক পরীক্ষাও। প্রতি দু’বছর অন্তর এই পরীক্ষা করিয়ে নিলেই মারণরোগ ঠেকানো সম্ভব।

হেপাটাইটিস বি ও সি কম জাঁদরেল নয়!

হেপাটাইটিস হয় মূলত যকৃৎ বা লিভারে ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে। হেপাটাইটিস-এ, বি, সি, ডি এবং ই— এই পাঁচটি ভাইরাস চিহ্নিত করা গিয়েছে। টেক্সাসের এমডি আন্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের চিকিৎসক সানইয়ং লি জানিয়েছেন, হেপাটাইটিসের পাঁচটি ধরনের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ও সি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এই দু’টি ভাইরাস থেকে নিরাময়-অযোগ্য ক্রনিক হেপাটাইটিস হতে পারে। আবার লিভারে দীর্ঘ দিন ক্ষত হতে হতে, তা লিভার ক্যানসারের কারণও হয়ে উঠতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয় লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারে। রক্ত, দেহরসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই দুই ভাইরাস। অশুদ্ধ ইঞ্জেকশন সুচ ব্যবহার, সংক্রামিত রক্ত গ্রহণ, সেলুনে ও উল্কি আঁকার সময়েও এই দুই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

চিকিৎসা কী?

হেপাটাইটিস বি-র টিকাকে আমেরিকার নিয়ামক সংস্থা ইউএসএফডিএ প্রথম ক্যানসার-প্রতিরোধী টিকা বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। হেপাটাইটিস বি-র টিকা নিলে তাতে হেপাটাইটিস বি-র সঙ্গে সঙ্গে হেপাটাইটিস ডি-রও প্রতিরোধ করা যায়। হেপাটাইটিস সি-র ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নতুন ওষুধ আবিষ্কারের ফলে তা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। যদিও সব চিকিৎসাই ব্যয়বহুল।

পরিপাকতন্ত্রকে ছারখার করে দেয় এইচ পাইলোরি

এমন এক ব্যাক্টেরিয়া যা পরিপাকতন্ত্রের উপর হামলা চালায়। থুতু ও লালার মাধ্যমে ছড়ায়। পাকস্থলী, অন্ত্রে ক্যানসারের অন্যতম কারণ এই ব্যাক্টেরিয়া। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এক ধরনের বিষাক্ত প্রোটিন বহন করে এই ব্যাক্টেরিয়া। মানুষের শরীরে ঢুকে এই প্রোটিন ছড়িয়ে দেয়। ফলে দেহকোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়ে যায়। পরিপাকের পুরো প্রক্রিয়াটিকে নষ্ট করে এই ব্যাক্টেরিয়া। তখন ক্ষুদ্রান্তের ভিতরে ক্ষত তৈরি হয়ে তা আলসারে পরিণত হয়। একে বলে পেপটিক আলসার, যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে ক্যানসারের রূপও নিতে পারে। বুকজ্বালা, পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা, খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফেঁপে থাকা, মুখ দিয়ে নুন জল ওঠা, গা-বমি ইত্যাদি হলে বুঝতে হবে যে পেপটিক আলসার হলেও হতে পারে। যদি আলসারের চিকিৎসা ঠিক সময়ে না হয়, তা হলে খাদ্যথলিতে ছিদ্র হয়ে রক্তপাত হতে শুরু করে। বমি, মলের সঙ্গে রক্ত বেরোতে থাকে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে তা প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

চিকিৎসা কী?

এই ব্যাক্টেরিয়াকে রোখার মতো কোনও প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি। পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমা বা ক্ষত তৈরি হওয়া আটকাতে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তা ছাড়া ফোটোথেরাপির কিছু প্রক্রিয়া আছে। খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতাই প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement