ছবি: সংগৃহীত।
গোলাপি নুন বা বিটনুন খেলে বোধ হয় ততটা ক্ষতি হবে না, যা সাধারণ নুন খেলে হয়— সাধারণ মানুষের মনে এমন একটা ধারণা ইদানীং তৈরি হয়েছে। বাজারে যে সব সংস্থার নুন পাওয়া যায়, তার মধ্যে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি। অন্য দিকে, সৈন্ধব লবণ (পিঙ্ক সল্ট) বা বিটনুনে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ়ের মতো খনিজ রয়েছে। তাই এই ধরনের নুন (পিঙ্ক সল্ট) অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ। কিন্তু তা কি আদৌ সত্যি?
দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বলছে, যাঁদের দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের সোডিয়াম কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাজারে যত ধরনের নুন পাওয়া যায়, সব ক’টির মধ্যেই সোডিয়াম রয়েছে। পরিমাণেও খুব বেশি হেরফের নেই। তাই এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই যে, গোলাপি নুন বেশি খেলেও রক্তচাপ বাড়বে না। কিংবা হার্ট বা কিডনির কোনও সমস্যা হবে না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেকেই জানেন না, ঠিক কতটুকু নুন প্রতি দিন শরীরের প্রয়োজন। এক এক জন মানুষের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ তাঁদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এক এক রকম হতে পারে। তবে, এক জন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের শরীরে নুনের পরিমাণ ঠিক কতখানি হলে তা বিপদসীমা ছাড়ায় না, তা নিয়ে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র একটি নির্দেশিকা রয়েছে।
নুন নিয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ‘আমেরিকান হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’-এর গবেষকদের দাবি, শরীরে জল ধরে রাখা নুনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নুনের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে অতিরিক্ত জল জমে যায়, এতে ব্রেনস্ট্রোকের ভয় থেকে যায়। প্রস্রাবের মাধ্যমে বাড়তি নুন শরীর থেকে নির্গত হয়। কিন্তু কিডনির কোনও সমস্যা থাকলে সেই বাড়তি নুন শরীর থেকে বেরোতে না পেরে মারাত্মক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত নুনে ক্ষয়ে যেতে থাকে হাড়ের ক্যালসিয়াম। তাই অস্থিসন্ধি ও হাড়ের নানাবিধ অসুখে প্রত্যক্ষ ভাবে নুনের ভূমিকা রয়েছে।
তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নুনের পরিমাণ কমে যাওয়া যেমন সমস্যার, তেমন তা বেড়ে গেলেও শরীরের প্রভূত ক্ষতি। তাই তাদের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী, প্রতি দিন পাঁচ গ্রাম বা হাফ চা চামচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে নুনের পরিমাণ। সাদা বা গোলাপি— যে কোনও ধরনের কাঁচা নুন এড়িয়ে চলতে হবে।