একাকিত্বকে অবহেলা করবেন না। ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক নগর জীবনের গতিবেগ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে একাকিত্ব। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই মানসিক সমস্যাকে হেলাফেলা করে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা। অনেকেই উপলব্ধি করেন না যে, কোনও ধরনের মানসিক সমস্যা মনের অসুবিধাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্রমেই শরীর-মন সব কিছুকেই গ্রাস করে। পাশাপাশি, নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আক্রান্তের সামগ্রিক জীবনযাপনে। ফলে নিজের পাশাপাশি, ক্ষতি হয় পরিবার-পরিজনেরও।
ইংল্যান্ডের জাতীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ৬০ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে একাকিত্বের শিকার। আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিকতম গবেষণা জানাচ্ছে, কোভিড চলাকালীন ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে কার্যত মহামারির রূপ নিয়েছে একাকিত্ব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পার্থিব সাফল্যকেই জীবনের মোক্ষ ভাবা ঠিক নয়। পেশাগত জীবনের ইঁদুর দৌড়ের মাঝে পড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষজন এমন কিছু জিনিস অবহেলা করেন, যেগুলি হয়তো তাঁদের জীবনের মূল উপজীব্য ছিল। এর ফলে সাফল্য এলেও তাকে উপভোগ করার মতো মানসিক শান্তি অধরা থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রেই।
অনেকেই ভেবে থাকেন চারপাশে বহু মানুষের ভিড় থাকলে কেউ একাকিত্ব বোধ করতে পারেন না। এটি একেবারেই ভ্রান্ত একটি ধারণা বলেও জানাচ্ছে বিভিন্ন সমীক্ষা। বন্ধুদের সংখ্যা বা অফিসের জনপ্রিয়তা, কোনও কিছুই একাকিত্বের পথ্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে নেটমাধ্যমে মানুষ বন্ধু খোঁজে, সেই নেটমাধ্যমই আরও দূরে ঠেলে দেয় বাস্তব থেকে।
ইট, কাঠ, পাথরের জঙ্গলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে অনেকেই চাপিয়ে নেন ছদ্মবেশ। নিজের আসল ব্যক্তি পরিচয় নিয়ে তৈরি হয় হীনমন্যতা। নিজের থেকে আলাদা কাল্পনিক কোনও এক আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে সহজ স্বভাবিকত্ব নষ্ট হয়। ফলে ক্রমশ কোনও কিছুকেই নিজের অন্তরের অংশ বলে মনে হয় না। এই বোধ ক্রমে বাড়তে বাড়তে মানসিক অবসাদের রূপ নিতে থাকে আক্রান্তের অজান্তেই।
কিন্তু কী ভাবে মিলতে পারে মুক্তি? মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ধরনের সমস্যায় সবের আগে বুঝতে হবে নিজের মনকে। চিনতে হবে নিজের ভাল লাগা-ভাল থাকার ক্ষেত্র। মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করলে, সাফল্যও সাফল্য বলে মনে হয় না। কাজেই সাফল্যের থেকেও দিন শেষে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি। অবহেলা করলে চলবে না মনের ছোট ছোট আপাত তুচ্ছ ভাল লাগা।