ঋতুবন্ধের কারণে অনেকেই অবসাদে ভোগেন। ছবি-প্রতীকী
৫০ ছুঁইছুঁই হলেই সবচেয়ে বেশি যে কথাটি মহিলাদের ভাবায়, তা হল ঋতুবন্ধ। এর কারণে অনেকেই অবসাদে ভোগেন। কিন্তু এটিও তো ঠিক যে, ঋতুবন্ধ একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যার সন্মুখীন আপনাকে এক দিন না এক দিন হতেই হবে!
ঋতুবন্ধ ঠিক কখন হয়? জন্মের সময় প্রত্যেক মহিলার ডিম্বাশয় প্রায় ১০ লক্ষ ডিম্বাণু থাকে। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর থেকেই শরীর এই ডিম্বাণুগুলিকে এক এক করে ছাড়তে থাকে, বয়স ৩০ পেরোনোর পর সংখ্যাটা কমতে থাকে। ৪০-এর পর আরও দ্রুত হারে কমে ডিম্বাণু সংখ্যা। এর সঙ্গে কমে আসে সন্তানধারণের সম্ভাবনাও। ঋতুবন্ধ হওয়ার অর্থ হচ্ছে ডিম্বাণু নিঃশেষিত এবং সেই কারণেই ডিম্বাশয়ে আর ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন তৈরি হচ্ছে না। বছর খানেক টানা ঋতুস্রাব না হলে ধরে নিতে হবে যে ঋতুবন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে, মহিলাদের গড়ে ৫১ বছর বয়সে ঋতুবন্ধ হয়। মূলত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যই অধিকাংশ মহিলাদের ঋতুবন্ধ হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই ধূমপান, গর্ভিরোধকের অধিক ব্যবহার, বাড়তি ওজন ঋতুবন্ধ পিছিয়ে যায়।
আর কী কী কারণে পিছিয়ে যেতে পারে ঋতুবন্ধ?
১) স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে, জিনগত কারণে ঋতুবন্ধ সঠিক সময়ে নাও হতে পারে। যাঁদের মায়েদের ঋতুবন্ধ দেরিতে হয়েছে, সেই মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা থাকে।
২) বাড়তি ওজনের কারণেও এমনটা হতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ থাকলে সেই মেদ থেকে ইস্ট্রোজেন তৈরি হয় তাই স্বাভাবিক ভাবেই ঋতুবন্ধ পিছিয়ে যায়।
৩) থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ঋতুবন্ধ দেরিতে হতে পারে।
৪) যে সব মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন উৎপাদনের হার বেশি তাঁদের ক্ষেত্রেও দেরিতে ঋতুবন্ধ হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে বেশি বার যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, তাঁদের ঋতুবন্ধ দেরিতে হয়েছে।
৫) যে সকল মহিলার যৌনজীবন নিয়মিত, তাঁদেরও ঋতুবন্ধ দেরিতে হতে পারে।
এটা কতটা চিন্তার?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এ ঋতুবন্ধ দেরিতে হলে মহিলাদের মূত্রথলি, জরায়ু এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির করা সমীক্ষাতেও একই কথা বলা হয়েছে। ৫৫ পেরিয়ে গেলেও যদি আপনার ঋতুস্রাব বন্ধ না হয় সে ক্ষেত্রে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। শরীরের স্থিতি বুঝে তাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন আদৌ ক্যানসারের ঝুঁকি আছে কি না। তবে এ কথাও ঠিক যাঁদের দেরিতে ঋতুবন্ধ হয়, তাঁদের হৃদ্রোগ ও অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।