কেন রক্তচাপ বাড়ছে, রোজের অভ্যাসে কী কী বদল আনলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে? ছবি: ফ্রিপিক।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ঘরে ঘরে। এখনকার ব্যস্ত সময়ে জীবনযাপনে এতটাই অনিয়ম হচ্ছে, যে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও যেমন বাড়ছে তেমনই কম বয়সে হানা দিচ্ছে ডায়াবিটিসও। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেই থাকছে না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এর কারণ কেবল খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম নয়, মানসিক চাপও বটে। অতিরিক্ত উদ্বেগ, দুশ্চিন্তার রেশও পড়ছে শরীরের উপর। আর সে কারণে রক্তচাপেরও হেরফের হচ্ছে। ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালের তথ্য বলছে, ভারতীয় পুরুষ ও নারীদের এক তৃতীয়াংশ উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। তার মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তার রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ভারতে ৩০ শতাংশ মহিলা ও ৩২ শতাংশ পুরুষ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের শিকার। আর সেই কারণেই কমবয়সে হৃদ্রোগের আশঙ্কাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য বলছে, দেশে এখন অন্তত ৩৫ শতাংশ মহিলা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
হাইপারটেনশন নিঃশব্দে হানা দেয় এবং আনুষঙ্গিক আরও নানা ব্যধিকে সঙ্গে নিয়েই আসে। সমীক্ষা বলছে, ভারতে প্রতি তিন জন প্রাপ্তবয়স্কের এক জন উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে মৃতের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। গত বছরের সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, শহরাঞ্চলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩.৮ শতাংশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিও পিছিয়ে নেই। সেখানেও অন্তত ২৭.৬ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপের শিকার।
রক্তচাপ জনিত সমস্যাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়— এসেনশিয়াল বা প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি। সমীক্ষা বলছে, এসেনশিয়াল হাইপারটেনশনই বেশি দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয়টির কারণ নিয়ে গবেষণা চলছে। রক্তচাপ ১৪০/৯০ ছাড়ালেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বলা যায়। যে কোনও সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত ১২০/৮০।যদি কারও রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর বেশি হয়, তখন তার রক্তচাপ বেড়েছে বলা যায়। ভারতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের অন্যতম কারণই হল অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ।
জীবনযাত্রায় কী কী বদল আনলে ভাল থাকা যায়
বাড়তি ওজন কমানো প্রথম কাজ। ওজন বাড়তে শুরু করলে রক্তচাপও একটি পর্যায়ে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। তখন ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়বে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক ডায়েট করে ওজন কমাতে হবে।
অতিরিক্ত ধূমপান না করাই ভাল, অ্যালকোহলের নেশায় লাগাম টানতে হবে।
সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেই হবে। বেশি পরিমাণে সোডিয়াম এবং তুলনায় কম পরিমাণে পটাশিয়াম শরীরে গেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। বাইরের খাবার, ভাজাভুজি, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া চলবে না। বেশি করে খেতে হবে সবুজ শাকসব্জি, ফল, দানাশস্য (যেমন ওট্স, ডালিয়া ইত্যাদি)।
পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। প্রতি দিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা টানা ঘুম দরকার।
কাজের ফাঁকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। জিমে যাওয়ার সময় না থাকলে হাঁটাহাঁটি করুন। সাইকেল চালানো, সাঁতার বা যে কোনও খেলাধুলো করতে পারলে ভাল হয়।