হার্ট ভাল রাখতে কোন ধরনের শরীরচর্চা ভাল, শিখিয়ে দিলেন প্রশিক্ষক। প্রতীকী ছবি।
কম বয়সেই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে অনেকের। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। জিমে ঘাম ঝরাতে গিয়ে, নাচতে গিয়ে, উঠতে-বসতে, এমনকি শুয়েও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা কম ঘটেনি। হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার এই বিষয়ে বলেছিলেন, হার্ট দুর্বল হচ্ছে কমবয়সিদেরও। অনিয়মিত জীবনযাপন, খাওয়াদাওয়া, নেশা করা ও শরীরচর্চার অভাবই বিপদ ডেকে আনছে। এরই ফল হল আচমকা হার্ট অ্যাটাক, যা নিঃশব্দে আসছে ও এক লহমায় তছনছ করে দিচ্ছে সব। সে কারণেই সময় থাকতে হার্টের জোর বাড়িয়ে রাখা খুব জরুরি।
কেবল খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানলেই যে হার্টের জোর বাড়বে, এমন নয়। এর জন্য দৈনন্দিন যাপনে কিছু নিয়ম পালন ও বিশেষ কিছু ব্যায়াম করা জরুরি। যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য বলছেন, “হার্টের শক্তি বাড়াতে হলে কার্ডিয়াক ব্যায়াম করতেই হবে। তার মধ্যে স্ট্যাটিক ও ডায়নামিক, দুই ভাগ রয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে করতে পারলে হার্টের স্বাস্থ্য যেমন ভাল হবে, তেমনই ফুসফুসের জোরও বাড়বে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকলে তা-ও দূর হবে।”
হার্ট ভাল রাখার ব্যায়াম
ডায়নামিক
সাইকেল চালানো:সারা দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সাইকেল চালালে হৃদ্পেশির ব্যায়াম হয়। হার্টে রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে হয়, হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমে। পাশাপাশি, পায়ের পেশিরও জোর বাড়ে। শরীরের মেদ ঝরতেও সময় লাগে না। জোরে সাইকেল চালালে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪৯৮ থেকে ৭৩৮ ক্যালোরি খরচ হয়।
হাঁটাহাঁটি: দিনে ২০ মিনিট হাঁটলেই হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। ওজন কমানো, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি হৃদ্রোগের মতো সমস্যার ক্ষেত্রেও হাঁটার অভ্যাস থাকলে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়। সকালে অথবা বিকালে খোলা হাওয়ায় হাঁটাহাঁটি করা ভাল। না হলে ঘরের ভিতরেই হাঁটতে পারেন।
সাঁতার: সাঁতার কাটলে হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস অনেক বেশি সুস্থ থাকে। আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কিংবা হাঁটু, পায়ের ব্যথা থাকলেও সাঁতার কাটতে পারেন। অনেক সময়ে এই ধরনের রোগে ব্যায়াম করতে সমস্যা হলেও সাঁতারে সাধারণত তা হয় না।
শ্বাসের ব্যায়াম
অনুপবাবু জানাচ্ছেন, বিভিন্ন রকম ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ়’ হার্টের জন্য ভাল। ডিপ ব্রিদিং, চেস্ট এক্সপ্যানসন, থোরাসিক ব্রিদিং নিয়ম করে করলে হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা বাড়ে। হৃদ্পেশিরও ব্যায়াম হয়।
হাত দুটো সামনে সোজা করে নমস্কারের মুদ্রা করতে হবে। এটি করতে করতে শ্বাস নিতে হবে। তার পর আবার হাত দুটো পাশে রাখার সময়ে শ্বাস ছাড়তে হবে। এই ভাবে ১০টি করে ৩ সেট করতে পারলে হৃদ্পেশির ভাল ব্যায়াম হবে। এটি ‘চেস্ট এক্সপ্যানসন’-এর কাজ করবে।
থোরাসিক ব্রিদিং-এর ক্ষেত্রে দুই হাত জড়ো করে থুতনির নীচে রাখতে হবে। হাতের আঙুলগুলি পরস্পরের সঙ্গে জোড়া থাকবে। এ বার কনুই দুটি দু’পাশে প্রসারিত করে শ্বাস নিতে নিতে এক বার নামাতে ও শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওঠাতে হবে। শুধু কনুই দু’টিই ওঠানামা করবে।
আরও একটি ব্যায়াম আছে, যার নাম ‘অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিং’। নাক দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস নিন। সাধ্যমতো কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। তার পর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। পুরো পদ্ধতিটি সাত-আট বার করুন। খেয়াল রাখতে হবে, শ্বাস নেওয়ার সময়ে নাভি যেন বাইরের দিকে ঠেলে ওঠে এবং শ্বাস ছাড়ার সময়ে যেন নাভি ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। এই ব্যায়ামে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা যথাযথ থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ঘুম ভাল হয়।
স্ট্যাটিক
এই পদ্ধতিতে তিনটি ব্যায়াম একসঙ্গে করতে হয় পূরক, কুম্ভক ও রেচক। অনুপবাবুর কথায়, ‘পূরক’ মানে শ্বাস টানা, ‘কুম্ভক’ ধরে রাখা ও ‘রেচক’ মানে ধরে রাখা শ্বাস বার করে দেওয়া। গভীর শ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব ফুসফুসে বাতাস ভরে নিতে হবে। এর পর যত ক্ষণ সম্ভব শ্বাস আটকে রাখুন। আবার সব বাতাস বার করে দিন। যদি ৩ সেকেন্ড ধরে শ্বাস টানেন, তা হলে ৬ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে হবে, আবার ৩ সেকেন্ড ধরে শ্বাস বার করে দিতে হবে।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। হার্টের রোগ থাকলে বা অন্য কোনও অসুখ থাকলে কার্ডিয়ো ব্যায়াম বা শ্বাসের কোনও রকম ব্যায়াম করা যাবে কি না, তা প্রশিক্ষকের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল। প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ব্যায়ামই করা ঠিক হবে না।