স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেত্রী হিনা খান। ছবি: সংগৃহীত।
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেত্রী হিনা খান। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে এসে নিজেই তাঁর অসুস্থতার কথা স্বীকার করেছেন ৩৬ বছর বয়সি অভিনেত্রী।
৩০ পেরোনো ভারতীয় মহিলাদের স্তন ক্যানসারের থেকে বড় ভয় সম্ভবত আর কিছু নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের চাবিটি থাকে আক্রান্তের কাছেই। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে ‘সেল্ফ ডিটেকশন’-এর কোনও বিকল্প নেই। ভারতে ইদানীং স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই সজাগ থাকতে হবে অল্প বয়স থেকেই।
বয়স যত বাড়ে, ততই স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এমনটাই মত ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের। তবে অল্পবয়সিদের যে এই রোগ হয় না এমনটা কিন্তু নয়। ২০ বছরের তরুণীও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণত পরিবারের কেউ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে কিংবা পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এর পাশাপাশি ওবেসিটিও কিন্তু স্তন ক্যানসারের অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। বাইরের খাবার, ভাজাভুজি জাতীয় খাবার এমনকি প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে যাঁরা ওজন বাড়িয়ে ফেলেন তাঁদের কিন্তু স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
স্তন ক্যানসার রুখতে চাই সচেতনতা। গৌতম বলেন, ‘‘স্তনে কোনও রকম যন্ত্রণাহীন মাংসপিণ্ড দেখা দিলে সেই সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে এখনও লজ্জা বোধ করেন মহিলারা। অল্পবয়সিদের মধ্যে এমন দ্বিধা আরও বেশি কাজ করে। এই সঙ্কোচ কাটিয়ে তুলতে হবে সবার আগে। স্তনে মাংসপিণ্ড দেখলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতি মাসে এক বার করে ‘ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন’ করতে হবে। অর্থাৎ নিজেকেই স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্তনের বিভিন্ন অংশ টিপে পরীক্ষা করতে হবে। কোথাও কোনও পিণ্ড আছে কি না, স্তনের রঙের কোনও রকম পরিবর্তন হয়েছে কি না, স্তনবৃন্ত থেকে অকারণ কোনও তরল নিঃসৃত হচ্ছে কি না, দু’টি স্তনের আকারে কোনও পরিবর্তন এসেছে কি না— এগুলি নিজেকেই যাচাই করতে হবে। আর কোনও রকম অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলেই সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনও অসুবিধা হচ্ছে না ভেবে বসে থাকলে চলবে না।’’
অভিনেত্রীর হিনা খানের স্তন ক্যানসারটি ধরা পড়েছে তৃতীয় পর্যায়। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়কে প্রাথমিক ধাপ মনে করা হয়। এই পর্যায় রোগ ধরা পড়লে রোগীর সুস্থতার হার অনেক বেশি। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায় এই রোগের ভয়াবহতা অনেকটাই বেড়ে যায়। তৃতীয় পর্যায় পৌঁছলে মনে করা হয়, রোগীর স্তনে অনেকটা অংশ জুড়েই ক্যানসারের কোষগুলি ছড়িয়ে পড়েছে। আর চতুর্থ পর্যায় রোগীর স্তন থেকে ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় পর্যায় এই রোগ ধরা পড়লে সাধারণত কেমোথেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা শুরু করে তার পরে অস্ত্রোপচার করা হয়। আগেকার মতো এখন আর স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগীর স্তন বাদ দেওয়া হয় না। উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নতুন করে স্তন তৈরি করা হয়। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে তৃতীয় পর্যায় রোগ ধরা পড়লেও সুস্থ হয়ে ফিরে আসা সম্ভব।
প্রতিকারের উপায়:
পরিবারে ক্যানসারে আক্রান্ত কেউ থাকলে সতর্ক থাকতে হবে।
ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
স্তনে অস্বাভাবিক কোনও রকম পরিবর্তন দেখলেই সতর্ক হোন।