তিন নিয়ম মানলে স্নায়ুর রোগের ঝুঁকি কমবে, দাবি গবেষকদের। প্রতীকী ছবি।
গিয়ান-ব্যারে রোগের পর থেকেই চিন্তাটা বেড়েছে। একসময়ে যে রোগটি ছিল বিরল, গত কয়েক মাসে সেই অসুখই অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে। কেবল গিয়ান-ব্যারেতেই কিন্তু শেষ নয়। গত মাসে পুণেয় আরও এক বিরল স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে অনেককে, যার নাম ‘বিকারস্টাফ ব্রেনস্টেম এনসেফেলাইটিস’ (বিবিই)। স্নায়ুর জটিল অসুখের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। সে নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকেরাও। ‘দ্য ল্যানসেট’-এর সমীক্ষাও তা-ই বলছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ অবধি দেশে জটিল ও বিরল স্নায়বিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৮.২ শতাংশ। স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি কমাতে তিনটি নিয়ম মেনে চলার কথা বলছেন গবেষকেরা।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, ‘নিউরোলজিক্যাল ডিজ়অর্ডার’-এ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত কারণে স্নায়ুর রোগ বাড়ছে, তা ছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রোগলক্ষণ দেখেও এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাও এর কারণ। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর সহযোগিতায় গত কয়েক বছরে দেশের নানা প্রান্তে স্নায়ুর রোগ নিয়ে সমীক্ষাও চলেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে স্ট্রোকের প্রভাব বেড়েছে। ১৯৯০ সালে যত জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতেন, এখন সংখ্যাটা তার দ্বিগুণ হয়েছে। কমবয়সিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে স্মৃতিনাশ, অ্যালঝাইমার্স, মৃগীরোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
স্নায়ুর রোগ থেকে সাবধান থাকতে তিন নিয়ম মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে—
১) খাওয়াদাওয়ায় বদল আনতে হবে। ভাল করে সেদ্ধ না করা মাংস, সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নয় এমন সি-ফুড থেকে মস্তিষ্কে রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবী জন্মাচ্ছে। দূষিত জল থেকেও পরজীবীর সংক্রমণ হচ্ছে, যা গিয়ান-ব্যারের মতো রোগের জন্য দায়ী। স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়া, টিনিয়া সোলিয়ামের কৃমি থেকে মস্তিষ্কের জটিল রোগও হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে মৃগীরোগের কারণও পরজীবীর সংক্রমণ বলেই জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
২) রোগের উপসর্গ দেখেও অবহেলা করা এর অন্যতম কারণ। লাগাতার মাথাব্যথা, বমি ভাব, ঝিমুনি মাইগ্রেন বা স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। আবার যদি লাগাতার মাথাঘোরা বা ভার্টিগোর মতো সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে ‘ভেস্টিবুলার সিনড্রোম’-এর ঝুঁকি বাড়তে পারে। সে কারণে সামান্য লক্ষণও এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
৩) নিজে থেকে ওষুধ খাওয়াও বিপজ্জনক হতে পারে। ক্লান্তি বোধ করলেই যে কোনও শক্তিবর্ধক ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ফেলা অথবা অতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়াও বিপদ ডেকে আনতে পারে। স্নায়ুর যে কোনও সমস্যাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেতে নিষেধ করছেন গবেষকেরা।