উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কী ভাবে। ছবি: ফ্রিপিক।
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া মানেই আতঙ্ক। উচ্চ রক্তচাপ এখন আর শুধু বয়স্কদের রোগ নয়। কমবয়সিদের মধ্যেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রক্তচাপের মাত্রা।
কাজের চাপ, ব্যস্ততা, প্রচণ্ড উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বাইরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস, ঘুম কম হওয়া এবং আরও বিভিন্ন কারণে অল্পবয়সিদের রক্তচাপের মাত্রা বাড়ছে। আর রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়া মানেই, তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে হৃদ্যন্ত্রে। ধীরে ধীরে হৃদ্যন্ত্র বিকল হতে শুরু করবে। তা ছাড়া ডায়াবিটিস, কিডনির রোগের মতো বিভিন্ন জটিল অসুখও মাথাচাড়া দেবে।
রক্তচাপ বেড়ে গেলে চিকিৎসকেরা শুধু ওষুধ খাওয়ার কথা নয়, জীবনযাত্রাতেও প্রয়োজনীয় কিছু বদল আনতে বলেন। শুধুমাত্র ওষুধ খেয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান হয় না। রোজের অভ্যাসে ছোট ছোট কিছু বদল আনলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
রক্তচাপ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে
রক্তচাপ ১৪০/৯০ ছাড়ালেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বলা যায়। যে কোনও সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত ১২০/৮০।
যদি কারও রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর বেশি হয়, তখন তার রক্তচাপ বেড়েছে বলা যায়। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। আচমকা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অর্থাৎ স্ট্রোকের জন্যেও দায়ী এই বিষয়টি।
জীবনযাত্রায় কী কী বদল আনলে ভাল থাকা যায়
১. বাড়তি ওজন কমানো প্রথম কাজ। ওজন বাড়তে শুরু করলে রক্তচাপও একটি পর্যায়ে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। তখন ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়বে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক ডায়েট করে ওজন কমাতে হবে।
২. কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, এমন সব খাবার না খাওয়াই ভাল। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল যাতে বেড়ে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সে জন্য বাইরের খাবার, ভাজাভুজি, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া চলবে না। বেশি করে খেতে হবে সবুজ শাকসব্জি, ফল, দানাশস্য (যেমন ওট্স, ডালিয়া ইত্যাদি)।
ডায়েটে নিয়মিত রাখতে হবে দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক। দইয়ে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আর পটাশিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে, যা রক্তচাপ বশে আনতে সাহায্য করে।
৩. নুন খাওয়া কমানোই ভাল। বেশি পরিমাণে সোডিয়াম এবং তুলনায় কম পরিমাণে পটাশিয়াম শরীরে গেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রত্যেক দিন এক চা চামচের বেশি নুন খাওয়া উচিত নয়। তবে কাঁচা নুন না খেয়ে রান্নায় নুন দিয়ে খাওয়াই ভাল। উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যায় দীর্ঘ দিন ধরে ভুগলে কাঁচা নুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
৪. তামাক জাতীয় জিনিস ছাড়তে হবে। মদ্যপানে লাগাম টানাই উচিত।
৫. পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। প্রতি দিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা টানা ঘুম দরকার।
৬. কাজের ফাঁকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। জিমে যাওয়ার সময় না থাকলে হাঁটাহাঁটি করুন। সাইকেল চালানো, সাঁতার বা যে কোনও খেলাধুলো করতে পারলে ভাল। সঙ্গে সকালে ঘুম থেকে উঠে, বিকেলে এবং রাতে খাবার পরে অল্পবিস্তর হাঁটাহাটি করলে সুফল পাবেন।
৭. নিয়মিত রক্তচাপ মাপা জরুরি। বয়স কম হলেও রক্তচাপ মাপতে হবে। বিশেষ করে যদি পরিবারে এমন কোনও রোগ থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে সময় থাকতে সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। সকলের শরীর এক রকম নয়। খাওয়াদাওয়াতেও অনেক বিধিনিষেধ আছে। উচ্চ রক্তচাপ যদি ধরা পড়ে তা হলে কী করণীয়, ডায়েট কেমন হবে, তা চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেওয়া উচিত।