রোজের জীবনে কিছু নিয়ম মানলেই পিত্তথলিতে পাথর জমার ঝুঁকি কমবে। ছবি: ফ্রিপিক।
পিত্তথলিতে পাথরের সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। এখনকার ব্যস্ত সময়ে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, শরীরচর্চার অভাবে বিভিন্ন রকম অসুখবিসুখ মাথাচাড়া দিচ্ছে। পিত্তথলিতে পাথর জমার কারণ অনেক। সাধারণত অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের গোলমাল, কোলেস্টেরলের বাড়বাড়ন্ত, দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকা পিত্তথলিতে পাথর জমার কারণ হতে পারে।
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’-এর তথ্য বলছে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের এই রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। মহিলারা বাড়তি ওজন কমাতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়েই বিভিন্ন রকম ডায়েট করে থাকেন। অল্প দিনে মেদ ঝরাতে দীর্ঘ সময়ে না খেয়ে থাকেন অনেকেই। ঘন ঘন উপোস, অসময়ে খাওয়া এই রোগকে ডেকে আনে। মেনোপজ়ের পরে হরমোনের ওঠানামার কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া ডায়াবিটিস থাকলে, ঘন ঘন কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেলে, তার থেকেও পিত্তথলিতে পাথর জমার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
পিত্তথলিতে পাথর জমছে কি না, তা কিছু লক্ষণে বোঝা যেতে পারে। যেমন পেটের উপরের অংশের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয়। সেটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পেটব্যথার সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বরও আসে অনেকের। সেই সঙ্গে ঘন ঘন বমি হতে থাকে। অনেক সময় পিত্তথলিতে পাথর জমতে শুরু করলে হেপাটাইটিসেরও সংক্রমণ হয়। তাই পেটব্যথা, বমি যদি ঘন ঘন হতে থাকে তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকেরা বলছেন, পিত্তথলিতে পাথর জমলে অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই। তবে খাদ্যাভ্যাসে বদল আনলে এই রোগ ঠেকানো সম্ভব। অস্ত্রোপচারের পরেও দ্রুত শরীর সারিয়ে তোলা যায়। তার জন্য পরিমিত খাবার, জীবনযাপনে কিছুটা সংযম জরুরি। ধূমপান, অ্যালকোহলের নেশা কমিয়ে দেওয়াই ভাল। অস্ত্রোপচারের পর কিছু দিন তরল খাবারেই ভরসা রাখুন। দুধ, ছানা, দই খাওয়া যেতে পারে। তবে ক্রিম না খাওয়াই ভাল। ভাজা, তেল-মশলাদার খাবার একেবারেই চলবে না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে চাইলে বাইরের খাবারে রাশ টানুন। পিৎজ়া, বার্গার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেশি চিনি দেওয়া খাবার খাওয়া চলবে না। চা বা কফিতে ক্যাফিন থাকায় সমস্যা বাড়াতে পারে। কাজেই অস্ত্রোপচারের পরে চা বা কফি মেপে খাওয়াই ভাল। ফাইবারে সমৃদ্ধ খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়। যেমন, সবুজ শাকসব্জি, আটা বা জোয়ার-বাজরার রুটি, ব্রাউন ব্রেড, পিনাট বাটার খেতে পারেন। বিভিন্ন রকম বাদাম, অ্যাভোক্যাডো খেতে পারেন। দিনে ২ থেকে ৩ চা চামচের বেশি তেল খাবেন না। সুষম খাবারের পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম করাও জরুরি। তবে কী ধরনের ব্যায়াম উপযুক্ত হবে, তা ফিটনেস প্রশিক্ষকদের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে বা তার অস্ত্রোপচার হলে কী কী নিয়ম মানতে হবে, ডায়েট কেমন হবে, তা চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।