কনুইয়ের ব্যথা সারবে কী ভাবে, জেনে নিন। ছবি: সংগৃহীত।
মাউস ধরে কাজ শুরু করলেই মনে হয় যেন ঝনঝন করে উঠছে কব্জি থেকে কনুই। ভারী কিছু তুলতে গেলেই প্রচণ্ড যন্ত্রণা। রুটি বেলতে গেলে, কাপড় নিঙড়ানোর সময়ে টনটন করে ওঠে কনুই।
পুরুষ হোক বা মহিলা— কনুইয়ের এমন ব্যথায় কাতর অনেকেই। কী থেকে ব্যথা হচ্ছে তা বুঝতে পারেন না বেশিরভাগই। কেউ ভাবেন বাতে ধরেছে, আবার কেউ মনে করেন, একদিক চেপে শোওয়ার কারণে ব্যথা হচ্ছে। আসলে কারণটা অন্য। দীর্ঘ দিন ধরে যদি কনুইয়ে ব্যথা হতেই থাকে, তা হলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করাতে বলেন। এ ব্যথার কারণ হতে পারে— ‘টেনিস এলবো’।
টেনিস এলবো কাদের হতে পারে?
টেনিস বা ক্রিকেট খেলোয়াড়দের এমন ব্যথা হয় সেটা শুনে থাকবেন। তবে টেনিস এলবোর ব্যথা হতে পারে যে কোনও মানুষেরই। যাঁরা খুব ভারী কাজ করেন, হাতে করে ভারী জিনিস তুলতে হয় বা কম্পিউটারে একটানা, একই ভঙ্গিতে মাউস ধরে কাজ করতে হয, তাঁদের এমন ব্যথা হতেই পারে।
চিকিৎসার পরিভাষায় এই ধরনের ব্যথাকে বলা হয় ‘ল্যাটেরাল এপিকন্ডিলাইটিস’। এ রোগে সাধারণত কনুইয়ের হাড়ের বাইরের দিকে ব্যথা হয়। সেই ব্যথা হাতের কব্জি অবধিও পৌঁছতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, কনুইয়ের পুরনো চোট থেকেও টেনিস এলবো হতে পারে। কখনও কখনও বাত বা আর্থ্রাইটিসের সূত্রপাত হয় এর থেকে।
যদি দেখা যায়, হাতের পেশি ফুলে উঠেছে, শিরায় শিরায় টান ধরছে, কাজ করতে গেলেই অসহ্য ব্যথা হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবিটিস ও থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কনুইয়ে টিউমার হলে বা কোনও রকম সংক্রমণ হলেও ব্যথা হতে পারে।
সারবে কী ভাবে?
আগে বুঝতে হবে রোগের কারণ কী? সেই কারণ ধরে রোগের চিকিৎসা শুরু করতে লাগে। যদি দেখা যায়, কোনও একরকম কাজ করলেই ব্যথা বাড়ছে, তা হলে সেই কাজ বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসকেরা বলছেন, টেনিস এলবো ধরা পড়লে, মোটরবাইক চালানো, মাউস ধরে দীর্ঘ সময় কাজ করা অনুচিত। ভারী কিছু তুলতেও তখন নিষেধ করা হয়।
ওষুধ ও ফিজ়িয়োথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া, স্টেরয়েড ইনজেকশনও দেন চিকিৎসকেরা। হাতে ‘কমপ্রেশন ব্যান্ড’ ব্যবহার করতে বলা হয়। যখন ওষুধ, ফিজ়িয়োথেরাপি কোনও কিছুতেই কাজ হবে না, তখন সার্জারির শরণাপন্ন হতে হবে। তবে নিজে থেকে তো আর সার্জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, চিকিৎসকের পরামর্শ লাগে।
সার্ভাইকাল স্পন্ডিলাইটিস থেকেও এ ধরনের ব্যথা দেখা দিতে পারে। কী কারণে ব্যথা হচ্ছে, সেটা রোগী নিজে বুঝতে পারেন না। তাই শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।