Eye yoga

যোগাসনের কিছু পদ্ধতিতেই উন্নত হবে দৃষ্টি, অকালে ছানি পড়বে না, সহজ করে শিখিয়ে দিলেন প্রশিক্ষক

শরীর সুস্থ রাখতে যে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম আছে, চোখের জন্যও আছে যোগের কিছু পদ্ধতি। এমন কিছু আসন আছে যা নিয়মিত করতে পারলে চোখের যে কোনও জটিল সমস্যা দূর হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ১৪:১৯
Easy eye exercises to improve vision

কোন কোন যোগাসন ভাল রাখবে চোখ। ছবি: ফ্রিপিক।

কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ, সারা ক্ষণ মোবাইল, ট্যাব ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে চোখের বেহাল দশা হচ্ছে অনেকেরই। বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে চোখের যত্ন আর ক’জন নেন! রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখা, অন্ধকার ঘরে একদম কাছ থেকে মোবাইল দেখার কারণে চোখে চিনচিনে ব্যথা, চোখ ফুলে যাওয়া, অনবরত জল পড়ার মতো সমস্যাও হচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে পড়ছে চোখ। এখন তো কম বয়সেও ছানি পড়ছে। ফলে অনেকেরই দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হচ্ছে অকালেই।

Advertisement

চোখ কী ভাবে ভাল থাকবে সেই নিয়ে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “এখন পলক ফেলতে ভুলে যাচ্ছেন মানুষজন। কারণ একনাগাড়ে কম্পিউটার বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে চোখের আর্দ্রতা নষ্ট হচ্ছে। চোখ থেকে যে জল বার হয়, যাকে আমরা অশ্রু বলি, তা আসলে চোখ পরিষ্কার করে। কিন্তু এখন মোবাইল বা ল্যাপটপের নীল আলো চোখের জলই শুকিয়ে দিচ্ছে।” অনুপ বললেন, ভারতীয় যোগে এমন কিছু পদ্ধতি আছে যা চোখের দৃষ্টি উন্নত করবে।

১) ফোর হেড কনট্রাকশন

মাথা সোজা রেখে কপাল কুঁচকে তাকান। কপালের পেশি এক বার সঙ্কোচন আর এক বার প্রসারণ করতে হবে। বার বার করলে চোখের পেশিরও ব্যায়াম হবে। অনেক ক্ষণ কাজ করার পরে এই ব্যায়াম করলে চোখে রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে। চোখের ক্লান্তি কাটবে।

২) আই বল রোলিং

মাথা সোজা রেখে চোখের মণি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে হবে। এক বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও এক বার ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। গোটা পদ্ধতিটি তিন বার করে করতে হবে সময়ান্তরে। গোটা চোখের ব্যায়াম হয় এই পদ্ধতিতে। চোখের শুষ্ক ভাব কেটে যায়।

৩) ভ্রামরী

ভ্রামরী

ভ্রামরী ছবি: ফ্রিপিক।

পদ্মাসন, বজ্রাসন বা যে কোনও সুখাসনে বসে দুই হাতের তালু দিয়ে দুই চোখ ঢাকতে হবে। দুই হাত কাঁধ বরাবর থাকবে। ওই ভাবে থেকে ‘ওঁ’ উচ্চারণ করুন। অনুপ বলছেন, “২০ সেকেন্ড মতো এই ব্যায়াম করতে পারলে চোখের দৃষ্টি যেমন বাড়বে, তেমনই মানসিক চাপও কমে যাবে অনেকটাই। খুব ভাল যোগাসন ভ্রামরী। চোখের পাশাপাশি মন ও মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হয়। মনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কেটে যায়।”

৪) ত্রাটক

চোখ ভাল রাখতে এই ব্যায়ামের কোনও তুলনাই হয় না। অনুপ জানাচ্ছেন, ত্রাটকের পদ্ধতি অনেক রকম হয়, তার মধ্যে দু’রকম সকলেই করতে পারেন। প্রথম, বাহ্য ত্রাটক, দ্বিতীয়, অন্তঃত্রাটক।

ত্রাটক।

ত্রাটক। ছবি: ফ্রিপিক।

বাহ্য ত্রাটক তিন রকম হয়—

জ্যোতি ত্রাটক: অন্ধকার ঘরে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে তার শিখার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হবে। পলক না ফেলে তত ক্ষণ চেয়ে থাকুন যত ক্ষণ না চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। শুষ্ক চোখের সমস্যা দূর করতে পারে এই ব্যায়াম। নিয়মিত অভ্যাসে দৃষ্টিশক্তিও উন্নত হয়, মনঃসংযোগও বাড়ে।

বিন্দু ত্রাটক: চোখ থেকে তিন ফুট দূরত্বে দেওয়ালের গায়ে কোনও স্টিকার আটকে দিন অথবা এমন চিহ্ন আঁকুন যা দেখতে পাবেন। এ বার সে দিকে পলক না ফেলে ঠায় তাকিয়ে থাকতে হবে। যত ক্ষণ পারবেন তাকান। তার পর চোখ কিছু ক্ষণ বন্ধ করে রেখে আবার অভ্যাস করুন।

যাত্রা ত্রাটক: পদ্মাসন বা সুখাসনে বসে ডান হাতকে কাঁধ বরাবর সামনের দিকে তুলে, ডান হাতের মুঠো বন্ধ করুন। বুড়ো আঙুল উপরের দিকে থাকবে। এ বার নাক বরাবর হাতের মুঠো বাঁ দিক থেকে ডান দিকে ও ডান দিক থেকে বাঁ দিকে নিয়ে যেতে হবে। আপনার চোখ থাকবে বুড়ো আঙুলের দিকে। অর্থাৎ, আঙুল বরাবর নজর ঘোরাতে হবে।

অন্তঃত্রাটক: ধ্যান করারই একটি পদ্ধতি, যা চোখের জন্য খুবই ভাল। অনুপ শেখাচ্ছেন, সুখাসনে বসে চোখ বন্ধ করে মনঃসংযোগ করুন। এ বার মহিলারা কপালের যেখানে টিপ পরেন, অর্থাৎ দুই ভ্রু-র মাঝখানে দৃষ্টি নিবদ্ধ বয়েছে এমনটা কল্পনা করতে হবে। এ ভাবে যত ক্ষণ পারবেন থাকুন।

এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। চোখের জন্য যে কোনও ব্যায়াম প্রশিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেই করা উচিত। চোখে যদি লেন্স বসানো থাকে অথবা চোখের কোনও অসুখ থাকে, তা হলে প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়া ত্রাটক নিজে থেকে করতে যাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement