কী ভাবে কাজ করে ক্রিটিক্যাল কেয়ার?
অনেক ক্ষেত্রেই শোনা যায় যে চিকিৎসকেরা কোনও গুরুতর বা আশঙ্কাজনক রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তির নির্দেশ দিচ্ছেন। এই ক্রিটিক্যাল কেয়ার আসলে কী? যখন একজন রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়, তখন সেখানে কে বা কারা তাঁদের দেখাশোনা করেন? ঠিক কোন কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয় রোগীদের? এমনই বহু প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করে মানুষের মনে। সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে, আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম সল্টলেক আমরি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের ডিরেক্টর, চিকিৎসক সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
দীর্ঘ আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতার কথাই তিনি তুলে ধরলেন আমাদের কাছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার অর্থাৎ আশঙ্কাজনক রোগীর চিকিৎসা। চিকিৎসক সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যে কোনও ক্রিটিক্যাল কেয়ারই মূলত দু’টি স্তম্ভের উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে: সময় এবং প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকা রোগীদের যত্নের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকতা বা গতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও হাসপাতালের ক্ষেত্রেই যখন কোনও রোগী ভর্তি হন, তিনি অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় থাকেন। সেই রোগীর পরীক্ষা থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয়, বা সাপোর্ট দেওয়া, ইত্যাদি কোনও ক্ষেত্রে যদি বিলম্ব হয়, তা হলে সেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আবার অন্যদিকে, যে সব চিকিৎসক, নার্স, সহকারী কর্মী এবং টেকনিসিয়ানরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। যা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সার্বিক দেখভালের জন্য আবশ্যিক।
পরবর্তী প্রশ্নটি হল, কেন এই সমস্ত কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার। কারণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রোগী পরিচর্যার অন্যতম প্রধান দিক হল পর্যবেক্ষণ। প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় বা একটানা রোগীদের দেখভালের প্রয়োজন হতে পারে। পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে এটিও অপরিহার্য যে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা কেবলমাত্র তথ্য পড়তেই নয়, পাশাপাশি সেই তথ্য গতির সঙ্গে ব্যাখ্যা করতে ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতেও সক্ষম।
ক্রিটিক্যাল কেয়ারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অর্গান সাপোর্ট। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রিটিক্যাল কেয়ারে আসা রোগীদের এক বা একের বেশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ; যেমন হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, বা মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। চিকিৎসা চলাকালীন, শরীর তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে পেতে বেশ কয়েক দিন সময় নিতে পারে। এই সময়ে, যে অঙ্গটি কাজ করছে না, সেটিকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ সরঞ্জামের ব্যবহারের করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটিকে ভেন্টিলেটর বলে।
ভেন্টিলেটর সম্পর্কে নানা মুনির নান মত। কেউ কেউ এই যন্ত্রটিকে আশীর্বাদ বলে মনে করেন। আবার কারও কাছে এটি ক্ষতিকারক। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার দিকে গুরুত্ব দিতে চান চিকিৎসক সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রোগী এটি থেকে যে সুবিধা পান তা আদতে যে কর্মীরা যন্ত্রটি চালাচ্ছেন, তাঁদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে যুক্ত।
এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বহু মানুষের কাছে এখনও বেশ উদ্রেকের কারণ। কিন্তু মনে রাখতে হবে দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং উপযুক্ত ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিম, কোনও রোগীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আসতে পারে। আমরি হাসপাতালে রয়েছে এই ধরনের বিশেষ ইউনিট, যারা প্রতিনিয়ত বহু রোগীকে ফের সাধারণ জীবনযাপনে ফিরতে সাহায্য করছে।
এটি একটি স্পনসর্ড প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনটি আমরি হাসপাতাল-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।