অনেকের হেঁশেলেই ঠাঁই পেয়েছে কৃত্রিম চিনির কৌটো। ছবি- সংগৃহীত
ওজন কমানো বা সুস্থ থাকা— লক্ষ্য যা-ই হোক, অনেকেই এখন রান্নায় বাড়তি চিনি দিতে পছন্দ করেন না। চিনি রয়েছে এমন খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, চকোলেট, নরম পানীয়ও অনেকে খাওয়া ছেড়ে দেন। রিফাইন্ড সুগার বা চিনি শরীরের কতটা ক্ষতি করে, তা বার বার মনে করিয়ে দেন চিকিৎসকরাও। শুধু ক্যালোরি বেড়ে যাওয়া নয়, ভুঁড়ি হওয়া, ত্বকের জেল্লা হারিয়ে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, চুল পড়ার মতো নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় চিনি থেকে। তাই বিজ্ঞানের ভাষায় ইদানীং চিনিকে ‘স্লো পয়জন’ও বলা হয়ে থাকে।
তবে খাদ্যরসিক বাঙালির চিনি ছাড়া চলে না। কোনও অনুষ্ঠান হলেই বাড়িতে মিষ্টির কোনও পদ না হলে ঠিক জমে না! সকাল-বিকেল চা বা কফি চিনি ছাড়া মুখে রোচে না। বিশেষ বিশেষ তরকারি এবং ডালে খানিক চিনি না পড়লে রান্নার খুঁত ধরেন পরিবারের সকলেই। ফলে চিনির বিকল্প খুঁজে বেড়ান সকলেই। ‘সুগার ফ্রি’ বা ‘স্টিভিয়া’র মতো কিছু কৃত্রিম বিকল্প বাজারে এখন সহজলভ্য। অনেকের হেঁশেলেই ঠাঁই পেয়েছে কৃত্রিম চিনির কৌটো। অনেক ডায়াবেটিক রোগীর রোজের ডায়েটেও স্থান পেয়েছে এই কৃত্রিম চিনির গুঁড়ো কিংবা ট্যাবলেট। তবে রোজের ডায়েটে এই কৃত্রিম চিনি খাওয়া কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?
আনন্দবাজার অনলাইনকে পুষ্টিবিদ রেশমি রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘বাজারে যে সকল কৃত্রিম চিনি পাওয়া যায়, তাতে অ্যাসপারটেম ও সুক্রালোজ নামক যৌগ থাকে। এই যৌগগুলির কারণেই কৃত্রিম চিনিতে মিষ্টি ভাব আসে। এগুলি কিন্তু শরীরের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। সুক্রালোজের তুলনায় অ্যাসপারটেম আরও বেশি ক্ষতিকর। এই দুই যৌগ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শরীরে নেগেটিভ ইলেকট্রন তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। যে কোনও কৃত্রিম জিনিসই তো বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল নয়, কৃত্রিম চিনিও তাই পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই শ্রেয়। কৃত্রিম চিনি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে না, ওজন বাড়বে না— এই ভেবে সকালে চা থেকে শুরু করে, সারাদিনের রান্নাবান্না এমনকি ক্ষীর কিংবা পায়েসও মিষ্টি ভাব আনতে কেউ কেউ এই প্রকার চিনির ব্যবহার করেন। এতে কিন্তু আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই মাত্রাতিরিক্ত কৃত্রিম চিনি খাওয়া উচিত নয়।’’
ঠিক কত পরিমাণে খেলে শরীরের ক্ষতি হবে না? রেশমির জবাব, ‘‘বাজার থেকে কৃত্রিম চিনি কেনার সময় দেখে নেবেন, কোন সংস্থার চিনিতে অ্যাসপারটেমের মাত্রা কম আছে। যদি পাউডার কৃত্রিম চিনি খান, তা হলে সারা দিনে আধ চামচের বেশি খাওয়া কখনই উচিত নয়। যাঁদের হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এই প্রকার চিনি না খাওয়াই ভাল। ওজন ঝরানোর ডায়েটেও কৃত্রিম চিনি রাখার বিষয় বেশ সচেতন থাকতে হবে।’’