চোখই বলে দেবে অ্যালঝাইমার্স হয়েছে কি না। ছবি: সংগৃহীত।
বাড়ি থেকে বাজারে যাবেন বলে বেরিয়েছেন। বাজারে ঢুকতেই ভুলে গেলেন কী কিনতে এসেছেন। অফিস থেকে ফেরার পথে ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে চিনতেই পারলেন না। বেশ কয়েক দিন ধরেই কি এই সমস্যাগুলি হচ্ছে? এই উপসর্গগুলি কিন্তু অ্যালঝাইমার্স রোগের লক্ষণ হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, চাপা পড়ে থাকা এই সব সমস্যা নিয়ে রোগীরা যখন আসেন, তত ক্ষণে মস্তিষ্কের অনেকেটা ক্ষতি হয়ে যায়। তাঁদের মতে, এমন সমস্যা ইঙ্গিত দেয় ডিমেনশিয়ার। তবে ডিমেনশিয়া রোগ নয়। সমীক্ষা বলছে, ডিমেনশিয়ার উপসর্গযুক্ত প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষই অ্যালঝাইমার্স রোগের শিকার। অথচ, এই রোগ নিয়ে সে ভাবে সচেতনতাই নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে, মানছেন চিকিৎসকরা। তাই উপসর্গগুলি নিয়ে আরও বেশি সচেতনতার প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানাচ্ছে, অ্যালাঝাইমার্সের লক্ষণ প্রথম চোখে ফুটে ওঠে। ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা অ্যালঝাইমার্সের অন্যতম লক্ষণ।
অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত ৮৬ জন রোগীকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। সেখানে প্রত্যেকের চোখ পরীক্ষা করার পর জানা গিয়েছে, সকলেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই চোখের সমস্যা শুরু হওয়ার পর থেকে অ্যালঝাইমার্স জাঁকিয়ে বসেছে শরীরে। অ্যালঝাইমার্সের সমস্যা থাকায় প্রত্যেকেরই চোখের ‘মাইক্রোগ্লিয়াল’ কোষের পরিমাণ কমে গিয়েছে। এই কোষগুলি মস্তিষ্ক এবং রেটিনা থেকে ক্ষতিকর উপাদান ‘বিটা-অ্যামাইলয়েড’ দূরে রাখে। চোখের অন্যান্য কোষগুলি সুরক্ষিত রাখতেও সাহায্য করে এটি। এই কোষের পরিমাণ তুলনায় কমে যাওয়ায় চোখের সমস্যা আরও বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০১৯ সালে বিশ্ব জুড়ে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যেখানে প্রায় পাঁচ কোটি ৭০ লক্ষের কাছাকাছি, সেখান ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ১৫ কোটি। কারও কারও আশঙ্কা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। অ্যালঝাইমার্স অ্যান্ড রিলেটেড ডিসঅর্ডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ২০২০ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ষাটোর্ধ্ব প্রায় ৫৩ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ধূমপান এবং মদ্যপান না করা, নিয়ম করে শরীরচর্চা করা, পর্যাপ্ত ঘুমনো ও সুষম খাবার খাওয়ার মতো অভ্যাস অ্যালঝাইমার্সের আশঙ্কা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।