মস্তিষ্কের স্নায়ুর জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় একাকিত্ব। ছবি: সংগৃহীত।
সকলেই আছেন, অথচ কেউ নেই। এই অনুভূতি মুখে বলে বোঝানোর নয়। সেখান থেকেই একাকিত্ব বোধের জন্ম। গান শুনে, সিনেমা-সিরিজ় দেখে কিংবা কাজে নিমগ্ন হয়ে তা ভুলে থাকার চেষ্টা করেন অনেকে। কিন্তু তা সাময়িক। দীর্ঘ দিন ধরে এমন চলতে থাকলে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে।
২০২৪ সালে ‘নেচার মেন্টাল হেল্থ’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে একাকিত্বের সঙ্গে যাপন করতে করতে যে সমস্যাগুলির সম্মুখীন হতে হয়, তা থেকেই পরবর্তী কালে ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
এই বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য মার্টিনা লুকেত্তির নেতৃত্বাধীন এক গবেষক দল বিশ্ব জুড়ে ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের উপর বৃহত্তর ক্ষেত্রে একটি সমীক্ষা করে। মেটা-অ্যানালিসিস পদ্ধতিতে করা এই সমীক্ষার শেষে দেখা যায়, একাকিত্বের সঙ্গে সহবাস করছেন, এমন মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩১ শতাংশ বেশি। যাঁদের এই সমস্যা নেই, তাঁরা তুলনায় নিরাপদ।
ডিমেনশিয়ার সঙ্গে একাকিত্বের যোগ কোথায়?
একাকিত্ব গ্রাস করলে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা কমে যায়। উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে তা মস্তিষ্কে প্রদাহ এবং মানসিক চাপের উদ্রেক করে। ফলে মাথার ভিতরের কোষগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। আবার, একলা হয়ে পড়ার অনুভূতি নিয়মিত শরীরচর্চা করতেও বাধা দেয়। যার ফলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়়তে থাকে।
একাকিত্ব এবং ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’গুলিও প্রায় একই রকম। নিজেকে সকলের থেকে আলাদা করে নিলেও একাকিত্ব আসে। আবার, অবসাদগ্রস্ত হলেও একাকিত্ব গ্রাস করতে পারে। এ তো গেল মানসিক দিক। গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিংবা দুরারোগ্য কোনও ব্যাধি থেকেও অনেক সময়ে একাকিত্ব গ্রাস করে। তবে গবেষকেরা এ-ও জানিয়েছেন, একাকিত্ব থেকে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডিমেনশিয়া হয়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘ভাসকুলার ডিমেনশিয়া’ বলা হয়।